সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য মানসম্মত ও আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা ন্যাশনাল হাসপাতাল। শহরের ইটাগাছায় অবস্থিত এ হাসপাতাল ইতোমধ্যেই চিকিৎসা সেবার মান ও রোগীদের আস্থার কারণে এলাকায় সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন, কারণ এখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী দেখছেন, যার ফলে স্থানীয় মানুষ রাজধানীতে না গিয়েও উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।
যে সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে সেবা দেন
হাসপাতালটিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী দেখছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও পেটের রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশফাক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমসিপিএস (মেডিসিন) এবং এমডি (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরিপাকতন্ত্র, লিভার, প্যানক্রিয়াস রোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি বর্তমানে মহাখালীর জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডাঃ আশফাক আহমেদ সিদ্দিকী প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা ন্যাশনাল হাসপাতালে রোগী দেখেন। গ্যাস্ট্রিক আলসার, লিভারের জটিলতা, হেপাটাইটিস বি ও সি, পেটের পানি জমা, লিভারের টিউমারসহ নানা জটিল রোগের চিকিৎসা তিনি দিয়ে থাকেন। সর্বাধুনিক RUT টেস্টসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়ায় রোগীদের মধ্যে বাড়ছে আস্থা।
এছাড়াও হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখছেন—
ডাঃ মোঃ আব্দুল আহাদ মুর্শিদ – বক্ষব্যাধি, ফুসফুস, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তিনি এম.বি.বি.এস, বি.সি.এস (স্বাস্থ্য), এম.ডি (পালর্মোলজি), আর.পি (মেডিসিন বিভাগ) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে ব্রঙ্কোস্কোপিও করেন।
ডাঃ এস এম শোয়াইব – চর্ম, যৌন ও এলার্জি বিশেষজ্ঞ। তিনি এমবিবিএস (সি ইউ), পিএলএবি (ইউকে), সিএমইউ, জিএমসি রেজিস্টার্ড (ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস), এএলএস (ইউকে) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অফ নর্থ টিস, ইউকে থেকে ইমার্জেন্সি মেডিসিন এন্ড ডার্মাটোলজি বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং ইউনাইটেড নেশনের সাবেক এক্স-ইমার্জেন্সি স্পেশালিস্ট।
সানজিদা শারমিন – গাইনী, প্রসূতি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম বিশেষজ্ঞ। তিনি এমবিবিএস, পিজিটি (গাইনী এন্ড অব্ক্স), সিএমইউ (ঢাকা) ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ডাঃ মোঃ আব্দুল আহছানুল কবীর (শাহীন) – মেডিসিন, হৃদরোগ ও বাতজ্বর বিশেষজ্ঞ। তিনি লন্ডন থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা দেন।
সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আলীম (নাদিম) – নিউরো মেডিসিন (ব্রেইন ও নার্ভ) বিশেষজ্ঞ। তিনি ঢাকা থেকে আগত এবং প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক।
ডাঃ মানস কুমার মন্ডল – মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। বিএসএমএমইউ থেকে এমডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত। তিনি সকাল ৯টা-২টা এবং দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখেন।
ডাঃ মোঃ ইনামুল হাফিজ (পলাশ) – হাড়ভাঙ্গা, জোড়া, বাত ব্যথা, ট্রমা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রোগী দেখেন।
ন্যাশনাল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়—রোগীদের জন্য আলাদা কেবিন, পর্যাপ্ত বিছানা, মানসম্মত খাবার, অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক মেশিন এবং এন্ডোস্কোপি ও আল্ট্রাসনোগ্রামের সুবিধা রয়েছে। প্রশিক্ষিত নার্স এবং অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রোগীবান্ধব থাকে। সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। রয়েছে আধুনিক পার্কিং ব্যবস্থা।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে না গিয়েও এখন তারা সাতক্ষীরাতেই মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাচ্ছেন।
অনেকেই জানিয়েছেন, ডাঃ আশফাক আহমেদ সিদ্দিকীর মতো অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞকে কাছ থেকে সেবা পাওয়ায় তারা উপকৃত হচ্ছেন। একই সঙ্গে গাইনী, চর্ম, বক্ষব্যাধি ও অন্যান্য সেবা থাকায় এক জায়গায় সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা মিলছে।
সাতক্ষীরা ন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী আব্দুল হাফিজ বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তারা আধুনিক ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা চালু করেছেন। দেশের যেকোনো স্থানের তুলনায় এই হাসপাতাল রোগীসেবায় পিছিয়ে নেই। সাতক্ষীরার মানুষ যেন রাজধানীতে না গিয়েই আমাদের এখানে সব ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসা পাচ্ছে।
সাতক্ষীরা ন্যাশনাল হাসপাতালের চেয়ারম্যান আমেরিকান প্রবাসী আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের স্লোগান হলো “সততার সাথে স্বাস্থ্য সেবা”। তিনি আরও যোগ করেন, তারা শুধু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একটি বিশ্বস্ত আশ্রয়স্থল। এখানে গুণগত মান ও সততাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যাতে প্রত্যেক রোগী যথাযথ সেবা পেয়ে সুস্থ জীবন ফিরে পান।
