দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

সাড়ে ৪ কোটি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পাইকগাছার বাইনতলা স্লুইচ গেট

আগামী বছর থেকে স্বাভাবিক হবে পানি সরবরাহ

17

মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা থেকে :খুলনার পাইকগাছায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বাইনতলা স্লুইচ গেট। ইতোমধ্যে ৬৮ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলমান নির্মাণ কাজ আগামী বছর ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

নির্মাণ কাজ শুরুর আগে থেকেই স্লুইচ গেটটি নষ্ট হয়ে বন্ধ ছিল। এ কারণে বিগত ১০ বছর ধরে এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমির কৃষি ফসল ও মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আগামী বছর থেকে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হলে শত শত কৃষক এবং মৎস্য চাষিরা উপকৃত হবে এবং হাজার হাজার বিঘা জমি পুনরায় চাষাবাদের আওতায় আসবে। এর ফলে মানুষের খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকট দুর হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য বাইনতলা স্লুইচ গেট এর মাধ্যমে কড়ুলিয়া নদী হয়ে উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের ৪,৫,৬,৭,৮ ও ৯ নং সহ ৬ টি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ষাটের দশকে নির্মিত পুরাতন স্লুইচ গেট টি সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ১০ বছর ধরে ওই এলাকার পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমির কৃষি ফসল ও মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘের ব্যবসায়ী জিএম রেজাউল করিম বলেন ওই এলাকার মধ্যে আমার দুই’শ বিঘার চিংড়ি ঘের রয়েছে। স্লুইচ গেট বন্ধ থাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে মৎস্য উৎপাদন এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এভাবেই বছরের পর বছর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছি। ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন খড়িয়া ঠাকুরুন বাড়ি, খড়িয়া বাসাখালী, খড়িয়া বাইনতলা, খড়িয়া খালের পূর্ব পাড়, পশ্চিম পাড়, উত্তর খড়িয়া, পূর্ব খড়িয়া, খড়িয়া মিনহাজ চক, ভড়েঙ্গার চক, গোয়াল বাড়িয়ার চক, ও খড়িয়া ওকায়বাসিয়ার চক এলাকার পানি সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বাইনতলা স্লুইচ গেট। গেটটি দ্রুত সচল করা প্রয়োজন।
এদিকে এলাকার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে জাইকা কম্পোনেন্ট -১ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৪ কোটি ব্যয়ে বাইনতলা স্লুইচ গেটটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২৫ সালের জুন মাসে। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকল্প মেয়াদ বর্ধিত করা হয় ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মোঃ সোহেল হোসেন জানান যেভাবে কাজ এগিয়ে চলছে তাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন বর্তমানে প্রকল্পের ৬৮ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৪২ ভাগ কাজ ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সানা বলেন স্লুইচ গেট টি সচল হলে ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা জমি পুনরায় চাষাবাদের আওতায় আসবে। কৃষকরা ধান এবং মৎস্য উৎপাদন করতে পারবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত বিন রফিক বলেন সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে স্লুইসগেটের নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে স্লুইচ গেট টি জনসাধারণ ব্যবহার করতে পারবে। এটি দুই কপাট বিশিষ্ট আধুনিক মানের স্লুইচ গেট এবং স্থায়িত্ব ও অন্যান্য গেটের চেয়ে অনেক বেশি বলে পাউবোর উপ বিভাগীয় এ কর্মকর্তা জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন স্লুইচ গেট নষ্ট হওয়ার কারণে ওই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। স্লুইচ গেট দিয়ে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বদলে যাবে সামাজিক পরিবেশ। এলাকার মানুষ অনেক উপকৃত হবে। চাষাবাদ করতে পারলে তাদের আর খাদ্য এবং অর্থনৈতিক সংকট থাকবে না। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.