দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

ময়লার স্তুপে প্রকৃতির মেলা: খুলনার নন্দনপুর নার্সারীর গল্প

22

সড়কের পাশে বাহরীসব ফুলের টব। দুর থেকে নজর কাড়ে। একটু চোখ ফেরালে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। কনক্রিটের নগরীতে এ যেন প্রকৃতির মেলা। নানান সব গাছের চারা, বাহারী ফুল, ফলে ভরে আছে। আগে এ জায়গাটা ময়লার স্তুপে ভরে ছিল। এখন সেখানে প্রকৃতির মেলা বসেছে।

খুলনার লোয়ার যশোর রোডের বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত নন্দনপুর সাহিদুল নার্সারী যেন কংক্রিটের শহরের বুকে প্রকৃতির এক টুকরো স্বর্গ। নানা রঙের বাহারি ফুল, ছায়া ঘেরা বৃক্ষ, ফলের গাছ—সব মিলে এক অপরূপ দৃশ্য। যে স্থান একসময় ময়লার স্তুপে ভরা ছিল, সেখানে আজ প্রকৃতির রঙিন মেলা।

এই নার্সারীর শিকড় ছড়িয়েছে ষাটের দশকে। খুলনা থানার ভেতরে বশির নামের এক ব্যক্তি শুরু করেছিলেন নন্দনপুর নার্সারী। তাঁর হাত ধরেই খুলনায় গড়ে উঠেছিল আরো ৮-১০টি নার্সারী। বশিরের হাতের স্পর্শে বেঁচে উঠেছিল মৃতপ্রায় অনেক গাছ। যদিও তিনি আজ নেই, তাঁর সৃষ্টি টিকে আছে তাঁর ছেলেদের মাধ্যমে।

মেজো ছেলে সাহিদুল তাঁর বাবার স্বপ্নকে ধরে রেখেছেন। নার্সারীর নাম বদলাননি—শুধু নিজের নামটি যুক্ত করেছেন। সাহিদুল বলেন, “আমি গাছের ভাষা বুঝি। আমার হাতে গাছ মরে না। মাটিতে পুতলেই গাছ জীবন ফিরে পায়।” বাবার সঙ্গে নার্সারীতে কাজ করতে করতে কখন যে তিনি এই পেশায় প্রবেশ করেছেন, তা নিজেও বুঝতে পারেননি।

নার্সারীতে শুধু গাছ বিক্রি হয় না, ছোটদের মাঝে গাছের প্রতি ভালোবাসাও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাহিদুল বলেন, “স্কুলের ছেলে-মেয়েরা আসলে তাদের আমি বিনা মূল্যে গাছ দিই, যাতে তারা প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখে।” তাঁর এই উদ্যোগ ছোটদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইতালিতে থাকা ছেলে আর বিয়ের পরে নতুন সংসারে থাকা মেয়েকে নিয়ে গর্বিত সাহিদুল নার্সারীর প্রতিটি গাছকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তাঁর বিশ্বাস, প্রতিটি গাছেই প্রাণ আছে, আর সে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার শুধু ভালোবাসা আর যত্ন।

নন্দনপুর সাহিদুল নার্সারী আজ শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি খুলনার মানুষের জন্য একটি প্রেরণার জায়গা। এই নার্সারী দেখিয়ে দেয়, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম দিয়ে কিভাবে একটি ময়লার স্তুপকে রূপান্তরিত করা যায় প্রকৃতির অনন্য এক প্রদর্শনীতে।

নগরীর ইকবাল নগর এলাকার বাসিন্দা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আমি প্রায় এ পথে যাওয়ার সময় দেখি। আজ নার্সারীতে আসলাম। কয়েকটি ফুলের চারা কিনলাম। পরে শুনলাম। এই নার্সারীটি ষাটের দশকে তৈরি হয়েছে। আমার ভুল না হলে খুলনার সব থেকে পুরো নার্সারীর মধ্যে এটিই অন্যতম।

নগরীর তেঁতুলতলা এলাকার মোঃ কামরুল মনি জানান, এই জায়গাটা আগে ময়লার স্তুপ ছিল। কিন্তু সেখানে এখন বিহারী সব ফুলের মেলা বসেছে। দেখতে ভাল লাগে। একই সাথে এখানে আসলে মন ভাল হয়ে যায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.