দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন; সেইসব পুলিশ কর্মকর্তা ও হাইপ্রোফাইলরা কোথায়?

36

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতাকে হত্যার ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে দুই হাজার ৩০০ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, পতিত সরকারের সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত আমলা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা ও সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র ২৫ পুলিশসহ ১১০ হাই প্রোফাইল ব্যক্তিকে। হত্যা মামলায় জড়িত শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্য ও কয়েকশ আওয়ামী লীগের হাই প্রোফাইল নেতা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। এদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

তবে পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে আর যেসব আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি, তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশের শীর্ষ কিছু কর্মকর্তা কোথায় রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও জানতে চাই। তারা কোথায়? তবে তিনি পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও আইন লঙ্ঘন করায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান।

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার কঠোর আন্দোলনকালে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর কতিপয় সদস্যরা সারাদেশে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় আর আহত হন হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ। আন্দোলনে গুলি করে লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের অনেকেই এখনও পুলিশ সদরদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ রক্ষা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সরকারের প্রথম উদ্যোগ হওয়া উচিত যারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার নির্দেশদাতা এবং সারসরি হত্যার সাথে জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা। সারাদেশে দায়েরকৃত হত্যা মামলায় যে সব দুর্বলতা রয়েছেন তা দূর করতে বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সেল তৈরি করা।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতাকে হত্যার ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে দুই হাজার ৩০০ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, পতিত সরকারের সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত আমলা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা ও সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে মাত্র ২৫ পুলিশসহ ১১০ হাই প্রোফাইল ব্যক্তিকে।

হত্যা মামলায় জড়িত শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্য ও কয়েকশ আওয়ামী লীগের হাই প্রোফাইল নেতা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। এদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে পুলিশ ও বিজিরি সহযোগিতায়।

সরকার পতনের পর ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালকে ব্রিফ করছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। তার মোবাইলে একটি ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলছিলেন, গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়। কিন্তু ওই কর্মকর্তাকে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় রুজুকৃত মামলার তদন্তে যাতে কোনো ধরনের গাফিলতি না হয় এ জন্য বিশেষ তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারীর কাছ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্তের নিয়মিত আপডেট নিচ্ছেন। একই সঙ্গে তদন্তে যাতে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর ও দুর্বলতা না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য মামলার সুপারভিশন কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।

গণ মামলা আর গণ আসামি নিয়ে সতর্ক করলো ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী বলেছেন, জুলাই-আগস্টকে কেন্দ্র করে যে সকল মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলোতে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা জড়িত নয় তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জুলাই-আগস্টের ঘটনার মামলাগুলোতে শুধু মাত্র হয়রানি করার জন্য নিরপরাধ ব্যক্তিদেরকে যারা আসামি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৫ আগস্টের পর ঢাকার বিভিন্ন থানায় অনেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় বাদী ইচ্ছে করে অনেক আসামি করেছেন। এসব গণ-মামলা গণ-আসামি থাকবে না।তদন্ত শেষে নির্দিষ্ট ঘটনায় যেসব আসামির নাম আসবে ঠিক তাদের নাম মামলায় থাকবে।

কমিশনার বলেন,’গণমামলায় গণআসামি থাকবে না। এসব মামলার বাদী বাণিজ্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হবে। মামলা অপকর্মে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ঘটনা ঠিক আছে আর মামলাও ঠিক আছে কিন্তু আসামি অনেক অপ্রয়োজনীয় করা হয়েছে। বাদী শুধু টাকা আয় করার জন্য এটা করছেন।

তিনি বলেন, জুলাই আগস্ট পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিল না । এত লোকের মৃত্যু হওয়ার কথা না। ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা ঠিক হয়নি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.