দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

বিপদ সীমার ওপরে হরিহর নদীর পানি কেশবপুরে রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ

45

টানা বৃষ্টির কারণে যশোরের কেশবপুর উপজেলার হরিহর নদের পানি বিপদ সীমার দুই ফুট ওপরে উঠে এসেছে। অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি উপচে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে।

এ কারণে কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল এলাকার মানুষ যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। পানি বৃদ্ধির কারণে জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এলাকার নদ-নদী পলিতে ভরাট হওয়ার পাশপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে সুষ্ঠুভাবে পানি প্রবাহ হতে না পেরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডে দেখা যায়, মধ্যকুল মধ্যকুল সরদারপাড়ার মানুষের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। তলিয়ে গেছে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি।

একইভাবে এক নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর সাহাপাড়া খ্রিস্টান মিশনের পাশের সড়কটিতেও উঠে এসেছে পানি। যশোর-চুকনগর সড়কের মধ্যকুল আমতলা এলাকায় জলাবদ্ধ মানুষ টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। টংঘরের পাশে দাঁড়িয়ে মধ্যকুল এলাকার হামিদা খাতুন (৪০) বলেন, এক মাস ধরে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। যে কারণে রাস্তার পাশে টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

ওই এলাকার ভ্যানচালক আব্দুল মোমিন  বলেন, ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় এসে টংঘর বাঁধছি। তার মতো অনেকেই রাস্তার পাশে টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এলাকার সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র  ওয়াজেদ খান ডবলু বলেন, জলাবদ্ধ মানুষ সাহায্য চান না-তারা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান। বিগত কয়েক বছর ধরে এলাকাটি জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মৎস্য ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, পলিতে নদ-নদী ভরাটের পাশিপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে কেশবপুরের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাঁশের সাঁকো তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করছেন। দ্রুত ভবদহ অঞ্চলের হরি নদী অববাহিকার যে কোন একটি বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালুসহ নদ-নদী খনন না করা হলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়বে।

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন বলেন, তার ইউনিয়নে ১১টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪০০-তে পৌঁছেছে। আলতাপোল এলাকার ১১টি পরিবার সড়কের পাশের একটি উঁচু ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল এনামুল হক বলেন, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে তিন হাজার ২০০ পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন। অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকার কারণে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে হরিহর নদে পানি বেড়ে দুই ফুট উপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে নদে পানি রয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ ফুট। স্বাভাবিক থাকার কথা আট দশমিক ৬৯ ফুট। তিনি আরও বলেন, হরিহর, আপারভদ্রা ও হরিনদীসহ দশটি সংযোগ খাল পুনঃখননের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে খনন কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে হরিহর নদের উৎপত্তিস্থল থেকে আপারভদ্রা নদীর তিন দশমিক ৭০০ মিটার খনন কাজ চলছে। পাশাপাশি খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট হতে উৎপত্তিস্থল থেকে হরিহর নদের চার কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হবে। খনন হলে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.