জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করছে, নতুন বাজেট দেশের অর্থনৈতিক সংকট চিহ্নিত করলেও, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের যে প্রত্যাশা ছিল, তার কোনো দিশা এতে নেই। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাজেটে আছে অঙ্কের হিসাব, কিন্তু নেই জনগণের স্বপ্নের প্রতিফলন।”
নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করেন, “জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন আনেনি, এনেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আশা। কিন্তু এই বাজেট পুরনো কাঠামোর পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছুই নয়।” তার মতে, ধনী-গরিবের আয়ের ব্যবধান কমাতে হলে করফাঁকিদাতা বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা জরুরি ছিল। কিন্তু সেই সাহসী পদক্ষেপ অনুপস্থিত।
বেকার সমস্যার কথা টেনে তিনি বলেন, “যে কর্মসংস্থান আন্দোলন থেকে অভ্যুত্থান শুরু, বাজেটে তার কোনো প্রতিফলনই নেই। গত এক বছরে ২৬ লাখ বেকার বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ানোর মতো বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাজেটে নেই।”
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে এনসিপি আহ্বায়ক জানান, “শিক্ষায় জিডিপির ন্যূনতম ২% বরাদ্দ দরকার হলেও সরকার দিয়েছে মাত্র ১.৭%। এটা চাহিদার সাথে অসম্পূর্ণ।”
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে আনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিদেশগামী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের কথা বলেছি আমরা, অথচ সেই মন্ত্রণালয়েরই বাজেট কাটা হয়েছে।”
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে কঠোর অবস্থান জানিয়ে এনসিপি বলেছে, “রেজিম চেঞ্জ হয়েছে, তাই এখন অনৈতিক সম্পদ বৈধ করার সুযোগ না দিয়ে কর ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা উচিত ছিল।”
তবে এক জায়গায় সাধুবাদ দিয়েছে দলটি। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪০৫ কোটি টাকাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে তারা। নাহিদ ইসলাম চান, “এই টাকাটা যেন পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসনে ব্যয় হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্যসচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ ও মুশফিক উস সালেহীন।
শেষ পর্যন্ত এনসিপির বার্তা একটাই—এই বাজেট প্রচেষ্টা দেখালেও কাঙ্ক্ষিত দিশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতির রূপান্তর যেখানে সময়ের দাবি, সেখানে পুরনো ধাঁচে তৈরি এই বাজেট ভবিষ্যতের প্রশ্ন রেখে যায়।