বরাদ্দকৃত জমি বুঝে পায়নি রূপসার রিয়েল লাইফ হিরো আঁখি
হতাশায় পুরো পরিবার, উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
এম সাইফুল ইসলাম: করোনাকালীন ২০২০ সালে ‘সংক্রমন প্রতিরোধে’ নিজেই মাস্ক তৈরি করে বস্তিবাসীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেন খুলনার রূপসা বাগমারা এলাকার ঝরে পড়া শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার। রাতারাতি এই ঘটনা আলোচিত হলে জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতি পায় আঁখি।
এরপরই আলোচনায় আসে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত আঁখির পরিবারকে নিয়ে। ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে রূপসার ইলাইপুরে সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পে দুই শতক জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় তার নামে। একই সাথে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য মিনি গার্মেন্টস করার জন্য পাশেই দুই শতকের আরেকটি জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তার বড় বোন মরিয়ম আক্তারের নামে। ২০২৪ সালে জুলাইয়ে জমির দলিল হয় মরিয়মের নামে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেই জমি বুঝে পায়নি পরিবারটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আঁখির নামে দেওয়া জমিতে পাঁচ সদস্যের পরিবারটি কোনমতে মাথা গুজে ঠাঁই নিয়েছে। বাবা অসুস্থ ফুসফুসের শ^াসকষ্টে আক্রান্ত। মায়ের মাজার হাড় ক্ষয়ে গেছে। চলাফেরা করতেও কষ্ট হয়। আর্থিক অনটনে তিন ভাই বোনের কেউ মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগও পায়নি। অভাবের সংসারে বিধবা বড় বোন মরিয়ম সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। কিন্তু তার উপার্জনে সংসার চলে না।
আঁখির পরিবার জানায়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গার্মেন্টস করার জন্য দেওয়া জমি এতদিনেও তারা বুঝে পায়নি। ফলে প্রশাসনের দেওয়া ১৫টি মেশিনও দীর্ঘদিন চালু না করায় অকেজো হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিনি গার্মেন্টস করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া জমিটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন দখলে রেখেছেন। এখানে তিনি একসময় ধান চাষ করতেন। আইনী জটিলতায় জমি না পাওয়ায় মিনি গার্মেন্টস করার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে আঁখির।
আঁখির বাবা মাসুদ মোল্লা বলেন, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরনের কারণে ২০২০ সালের চার বাংলাদেশিসহ আঁখিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে আঁখি তার মতো অসহায়দের নিয়ে গার্মেন্টস করার স্বপ্নের কথা জানায়। ওই সময় আঁখির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে গার্মেন্টস করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। ওই সময় তাকে ফ্যাটলক, ওভার লক, প্লেন, স্টিচ ও কাটিং মেশিনসহ ১৫টি মেশিন দেওয়া হয়। এসব সরঞ্জাম পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলো আঁখি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আনন্দ বিষাদে পরিনত হয়।
আঁখি জানায়, গার্মেন্টস কারখানা না দিতে পারায় বর্তমানে ছোট আকারের মাস্ক তৈরি করেই চলছে তার সংসার। এক দেড় মাস পরপর একটা অর্ডার আসে মাস্ক তৈরির। সেখান থেকে মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা আসে। যা দিয়ে টানাপোড়নে সংসার চলছে। আঁখি আরও জানায়, এখনও জমি বুঝে পাইনি। গার্মেন্টসটা করতে পারলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আহমেদ হামীম রাহাত বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আঁখি পরিবারের সাথে সমন্বয় করে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করবো।
এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আঁখির পরিবারকে ওই জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।