বকেয়া বিদ্যুৎ বিলে আটকা সোনালী জুট মিল!
# মরিচা ধরছে যন্ত্রপাতিতে # অন্ধকারে ৪শ’ শ্রমিক পরিবার # মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ
এম সাইফুল ইসলাম: শিল্পনগরী খুলনায় এক যুগ ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সোনালী জুট মিল। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী পরিশোধ করছে না কর্তৃপক্ষ। দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ লাইন কেটে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ফলে অন্ধকারে থাকছে কোয়ার্টারে থাকা কয়েকশত পরিবার। মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিকরা।
জানা যায়, বেসরকারীকরণের অংশ হিসেবে খুলনার মিরেরডাঙ্গা এলাকার সোনালী জুট মিলটি ১৯৮২ সালে ব্যক্তিমালিকের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মিলটি কিছুদিন চলে আবার বন্ধ থাকে। বদল হতে থাকে মিলের মালিকানাও। মিলটি দীর্ঘ সময় পড়ে থাকায় যন্ত্রপাতিতে মরিচা ধরেছে। মিল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিলটি একটানা দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে চালু হয়েছিল। দুই মাস চালু থাকার পর আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়।
ওই দুই মাস মিল পরিচালনা করে আমেনা ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে চেয়ারম্যান শামছুন্নাহার দুই বছরের চুক্তিতে মেসার্স রাসেল এন্টারপ্রাইজকে মিলটি পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে মৌখিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু এরপরেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে অনাগ্রহ দেখিয়ে চুক্তি থেকে সরে যায় রাসেল এন্টারপ্রাইজ। যার ফলে মিল চালুর সম্ভাবনা ক্ষীন হয়ে যায়।
এদিকে বকেয়া বিলসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা শ্রমিকদের বাকি ছিলো বলে জানায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত তিন বছর আগে মিলের চেয়ারম্যান
মারা গেলে সোনালী জুট মিলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব নেন মিলের এ জি এস (কেরানী) মিম তালুকদার। অভিযোগ ক্ষমতার দাপটে তৎকালীন সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ানের ভাই মো. শাহাবুদ্দিনের যোগসাজশে মিলে ব্যাপক লুটপাট ও মেশিনারিজ চুরি হয়।
আওয়ামী প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিম তালুকদার তিন বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও তিনি সোনালী জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছেন। শ্রমিকরা জানায়, মিলের বিদুৎ লাইন কাটানোর পিছনে লুটপাটকারী চক্রের হাত রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতের অন্ধকার মিলটিতে চলে লুটপাট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিক জানান, ২০১৩ সাল থেকে এই মিল থেমে থেমে চলে। একেকজন ইজারা নেন, দুয়েক মাস চালু রেখে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে চলে যান। আরেক শ্রমিক হতাশার সুরে বলেন, ‘মিল মালিকরা উৎপাদন ও শ্রমিকদের কথা বলে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেন; কিন্তু মালিকরা শ্রমিকদের ঠকিয়ে মিল বন্ধ করে দেন।’
বেসরকারি পাট, বস্ত্র ও সুতা কল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন জানান, ‘সোনালী জুট মিলসহ বেশ কয়েকটি ব্যক্তিমালিকানাধীন মিল মাঝে মধ্যে চলে, আবার বন্ধ হয়ে যায়। এতে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অর্থসংকট বাড়ে। আবার মিলের কাছে পাওনাও বাড়ে। গেলো ডিসেম্বরে মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা মজুরি বন্ধ থাকে।
সোনালী জুট মিলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মীম তালুকদার জানান, দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিদ্যুৎ বিল বন্ধ করে দেয়ায় রাসেল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির ব্যাপারে আগাচ্ছিলাম, তাও বন্ধ করে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা কখনোই চাইবো না মিলটি বন্ধ থাকুক। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের জায়গা থেকে মিল চালুর চেষ্টা করছি।