রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবার সরাসরি ঘোষণা দিলেন—ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’। এই ঘোষণা কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই রুশ সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীমান্তবর্তী ইউক্রেনীয় অবস্থানগুলোতে হামলা জোরদার করতে।
এই ‘বাফার জোন’-এর লক্ষ্য? রাশিয়ার বেলগোরোদ, ব্রিয়ানস্ক ও কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় হামলা ঠেকানো—যেখানে প্রায়শই ড্রোন হামলা, গোলাবর্ষণ এবং নাশকতা চালানো হয়েছে।
২০২৩ সাল থেকে এই পরিকল্পনার গুঞ্জন শোনা গেলেও এবার তা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। ২২ মে, এক সরকারি বৈঠকে পুতিন জানান, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। “আমাদের সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে এই মিশনে কাজ করছে,” বলেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বিস্তারিত তথ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেবে। তবে জানা গেছে, বাফার জোন ইউক্রেন সীমান্তঘেঁষা তিনটি রুশ অঞ্চলে বিস্তৃত হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কৌশলগত কারণ—
১. সীমান্তজুড়ে হামলার ঝুঁকি বেড়েছে:
ইউক্রেন পশ্চিমা দূরপাল্লার অস্ত্র পাচ্ছে। ক্রমাগত রুশ শহরে গোলাবর্ষণ, ড্রোন হামলা এবং অনুপ্রবেশ চলতে থাকায় রাশিয়া আগেভাগেই ফ্রন্টলাইন সরাতে চাইছে।
২. দরকষাকষির চাল:
এই ‘বাফার জোন’ ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনা বা যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে রাশিয়ার পক্ষে একধরনের চাপ তৈরির উপায় হতে পারে। পশ্চিমা দূতদের মধ্যে কেউ কেউ এমন জোনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
৩. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা:
পুতিনের এই ঘোষণা আসলে দীর্ঘমেয়াদি এক যুদ্ধ পরিকল্পনার অংশ, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ধীরে ধীরে পেছনে ঠেলে দিতে সহায়ক হবে।
রাশিয়ার দাবি, ইতিমধ্যেই তারা ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম দখল করেছে। ইউক্রেন এই এলাকায় ব্যাপক লড়াইয়ের কথা স্বীকার করেছে। সীমান্ত অঞ্চল থেকে ৫২ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০ মে, পুতিন নিজে কুর্স্কে হাজির হন, যেখানে স্থানীয় এক নেতা তাকে বলেন সুমি শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। উত্তরে পুতিন হেসে বলেন, “আমার নতুন নিয়োগ পাওয়া নেতা তো সবই চান!”
এই ‘বাফার জোন’ বাস্তবায়ন হলে রুশ শহরগুলো ইউক্রেনীয় গোলাবর্ষণের সীমার বাইরে থাকবে। কিন্তু একসঙ্গে এর জন্য চাই আরও সেনা, সরঞ্জাম, এবং দীর্ঘ রসদ সরবরাহ—যা রাশিয়ার উপর বাড়তি চাপ ফেলবে।
যুদ্ধ এখনো পুরোপুরি বিস্তৃত হয়নি, তবে রাশিয়ার সামরিক কৌশল ধীরে ধীরে আগাতে চায়—একবারে ঝুঁকি না নিয়ে ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য।
পুতিনের এই নতুন পদক্ষেপ কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, কূটনৈতিক স্তরেও রাশিয়ার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। কিন্তু এতে ইউক্রেন সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যার মূল্য গুণতে হবে দুই দেশকেই।