এবার ‘তৌহিদী জনতার’ হুমকির মুখে বাতিল হয়ে গেল ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী। জানা যায়, মহড়ার প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা ছিল মঞ্চে ওঠার; এর মধ্যে ‘তৌহিদী জনতার’ হুমকি চিঠি পেয়ে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করা হয়েছে। প্রদর্শনী বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহিলা সমিতি মিলনায়তন কর্তৃপক্ষ।
চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতি মিলনায়তনে টানা দুই দিন এ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল।
‘শেষের কবিতা’ নাটকের অভিনয়শিল্পী তন্নি ইসলাম মিষ্টি বলেন, “সবকিছু ঠিক ছিল, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবিগুরুর ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হব। কিন্তু হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেল। জানতে পারলাম, তৌহিদী জনতার হুমকির মুখে নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়েছে। এটা একেবারেই ঠিক নয়। আমরা কি এই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? নাটক তো কোনো খারাপ কিছু নয়। এইভাবে একটার পর একটা হুমকি বাস্তবায়ন হলে সংস্কৃতি একদিন হুমকির মুখে পড়বে।”
এদিকে,রোববার ‘শেষের কবিতা’ নাটকের নির্দেশক নূনা আফরোজ বলেন, “আমরা সব রকম প্রস্তুতি শেষ করে প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সকালে আমাদেরকে জানানো হল, মিলনায়তনের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। ‘তৌহিদী জনতা’ নাকি হুমকি দিয়েছে।”
এ নাটকের প্রদর্শনীর সময় মহিলা সমিতিতে ভাঙচুর হলে তার দায় ‘তৌহিদী জনতা’ নেবে না—বলা হয়েছে হুমকির ওই চিঠিতে। আর ওই চিঠি পেয়ে ‘নিরাপত্তার’ কথা বিবেচনায় নিয়ে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ প্রাঙ্গণেমোরকে দেওয়া মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা সমিতির নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শারমিন আরা বলেন, “আমাদের কাছে একটা চিঠি এসেছে ‘তৌহিদী জনতা’ নামে। মহিলা সমিতিতে তো আরও অনেক ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মহিলা সমিতির নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রাঙ্গণেমোরকে দেওয়া মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না—প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি। আমাদের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিল করেছে।”
প্রাঙ্গণেমোর জানিয়েছে, হঠাৎ করে মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিলের প্রতিবাদে বিকেল ৫টায় মহিলা সমিতির সামনে ‘শেষের কবিতা’ নাটকের পোশাক পরে নাট্যকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস থেকে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অনন্ত হিরা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। এটি দলের ষষ্ঠ প্রযোজনা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একদল ব্যক্তির হুমকির মুখে স্থগিত হয়েছিল ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’। পরে রমজানের মাসে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ কোনো নাট্যদলকে মিলনায়তনে বরাদ্দ দেয়নি।
ঈদের পর প্রাঙ্গণেমোরের ‘শেষের কবিতা’ দিয়ে মহিলা সমিতিতে ফের নাটকের প্রদর্শনী শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, ‘তৌহিদী জনতার’ হুমকি চিঠিতে সেই প্রদর্শনীও অনিশ্চয়তায় ডুবলো।
চলতি মাসের শুরুতে মসজিদ কমিটির লোকজন ও ‘এলাকাবাসীর’ বাধায় স্থানীয় রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘের একটি নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায়। পরে অবশ্য ‘রাজনৈতিক নেতাদের দ্বন্দ্বে’ বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘আপন-দুলাল’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয় একদিন পর।
এর আগে গেল বছরের নভেম্বরের শুরুতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন আয়োজকরা।