দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার কয়রায় অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপের দাবি

42

কয়রা(খুলনা) প্রতিনিধিঃ ​জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাসে ঘরছাড়া হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। এমন বাস্তবতায়, স্থানচ্যুত এই জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে এবং তাদের পুনর্বাসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে খুলনার কয়রা উপজেলায় এক গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হলো।

​সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় কয়রা উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এই সভায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কারিতাস জার্মানি ও বিএমজেড-এর আর্থিক সহায়তায় কারিতাস খুলনা অঞ্চলের “ডিআরআর এন্ড সিসিএ” প্রকল্পের উদ্যোগে এই অ্যাডভোকেসি অনুষ্ঠিত হয়।​

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শেখ সাইফুল্লাহ। সভায় সভাপতিত্ব করেন কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল বাকী। এতে কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ ইসমাইল হোসেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশিদ, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শরিফুল আলম এবং উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান, এম এ হাসান, জেলা বিএনপির সদস্য।

​সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কয়রা উপজেলার সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও এনজিও প্রতিনিধিরা, স্থানীয় অভিবাসন প্রভাবিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিগণ।

কারিতাস খুলনা অঞ্চলের ডিআরআর-সিসিএ প্রকল্পের মিল কো-অর্ডিনেটর মোঃ ইব্রাহিম হোসেন সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। ​অনুষ্ঠানের সভাপতি ইউএনও মোঃ আব্দুল্লাহ আল বাকী জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের তীব্রতা প্রতি বছর বাড়ছে, যা মানুষকে সহায়-সম্বল হারিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে অভিবাসী হতে বাধ্য করছে। ইউএনও এই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা জরুরি বলে উল্লেখ করেন।

অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের আশ্বাস দেন তিনি। ​কি-নোট স্পিকার ড. মোঃ ইসমাইল হোসেন খুলনা জেলার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, বন উজাড়, শিল্পকারখানা ও যানবাহনের নির্গমনে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় তিনি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ​তিনি তাঁর বক্তব্যে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির স্যালাইনিটি (লবণাক্ততা) বৃদ্ধির ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি বিষয়েও বিশেষভাবে আলোকপাত করেন।

তিনি উল্লেখ করেন যে, মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি পান ও ব্যবহার করার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ ​উচ্চ রক্তচাপ , লবণ শরীরে প্রবেশ করার কারণে গর্ভবতী নারীদের প্রসবকালীন উচ্চ রক্তচাপএবং অন্যান্য সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।লবণাক্ত পানিতে দীর্ঘসময় কাজ করা বা গোসল করার কারণে চর্মরোগ, চুলকানি এবং ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।যদিও লবণাক্ততা সরাসরি জীবাণু সৃষ্টি করে না, তবে এর কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত উৎস থেকে পানি পান করে, যা কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটায়।

দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ লবণাক্ত পানি গ্রহণ কিডনির কার্যকারিতার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
​উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা জলবায়ু সহনশীল একটি সমাজ গঠনে একাধিক যুগান্তকারী সুপারিশ পেশ করেন:​ ​অভিবাসীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ​পরিকল্পিত উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি।

​সৌর শক্তির ব্যবহার ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়। ​খাদ্য ও পানির অপচয় রোধ। ​পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার হ্রাস। ​জমিতে জৈব সারের প্রয়োগ। ​কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন গ্যাসের মতো অতি দূষণকারী গ্যাস নিয়ন্ত্রণ। ​উপস্থিত সকলে একমত হন যে, দ্রুত এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসন প্রক্রিয়াকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.