দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

‘গণহত্যা বন্ধ হোক’, গাজার পক্ষে সিডনি ব্রিজজুড়ে লাখো মানুষের মিছিল

58

বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সবাই নেমেছিল পথে। গতকাল রবিবার অন্তত ১ লাখ মানুষ গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজ অতিক্রম করেন। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের মতে, সিডনির ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ। আয়োজকদের হিসাবে সংখ্যাটি ৩ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

বৃষ্টিভেজা এই মিছিলটি ১.২ কিমি দীর্ঘ ব্রিজজুড়ে বিশাল মানবপ্রাচীর তৈরি করে। পুলিশের পক্ষ থেকে একপর্যায়ে জনসমাগমের ভিড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পদযাত্রা সাময়িকভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়।

নিউ সাউথ ওয়েলস সুপ্রিম কোর্ট পদযাত্রার অনুমতি দেওয়ার পর ‘ফিলিস্তিন অ্যাকশন গ্রুপ’ বলেছিল, এটি হবে ‘মানবতার বিশাল মিছিল’—সেই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবেই রূপ নেয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে প্রতি রবিবার নিয়মিত ফিলিস্তিনপন্থী এই দলটি মিছিল করে আসছে।

এই প্রথম তারা সিডনির বিশ্বখ্যাত হারবার ব্রিজে পদযাত্রা করে। ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড প্রাইডের পর এই প্রথম ব্রিজটি জনসাধারণের সমাবেশের জন্য বন্ধ করা হয়।
‘ইতিহাসের সাক্ষী’

আলী নামে এক অংশগ্রহণকারী তার স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। কাঁধে থাকা তার ৮ বছরের কন্যা আলিয়া চিৎকার করে বলছিল, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।

মুখে আঁকা ছিল ফিলিস্তিনি পতাকার চারটি রং। আলী বলেন, ‘এটা ইতিহাস। মানুষই হারবার ব্রিজ বন্ধ করেছে – জনগণই করেছে এটা।’

মিছিলে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। এক শিশুকে দেখা যায় একটি স্তম্ভে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে, ‘আমাদের হাজার হাজার, লাখ লাখ, আমরা সবাই ফিলিস্তিনি!’

শত শত শিশু ও কিশোর হাতে তৈরি পোস্টার ও খালি হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে অংশ নেয়—যার শব্দ ছিল গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষের প্রতীক।

ক্লাস ফাইভের ছাত্রী মেয়লা জানায়, ‘আমি আজ যা দেখেছি, তা একদিন আমার নিজের সন্তানদের বলব। আমি ফিলিস্তিনি শিশুদের হয়ে কথা বলছি, ওদের জন্য যুদ্ধে আমার মতো অনেকেই কষ্ট পাচ্ছে।’
তীব্র বৃষ্টির মাঝেও প্রতিবাদকারীদের মনোবল ছিল অটুট। প্রতিটি ট্রেন যাওয়ার সময় ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষ চিৎকার করে বলছিল, ‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন।’ পর্যটকরা ব্রিজের ওপরে উঠে হাত নাড়ছিলেন। সেতুর ১ হাজার ৩৩২টি ধাপ বেয়ে ওঠা পর্যটকরা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে নিচে নেমে আসেন এবং ইতিহাসের এক উন্মোচিত মুহূর্তের সাক্ষী হন।

রাজনীতিকদের অংশগ্রহণ

মিছিলে অস্ট্রেলিয়ার আলোচিত ব্যক্তি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জসহ অনেক রাজনীতিক ‘মার্চ ফর হিউমেনিটি, সেভ গাজা’ ব্যানার হাতে ছিলেন। নিউ সাউথ ওয়েলস-এর ৫ জন লেবার এমপি এবং দুই মন্ত্রী পেনি শার্প ও জিহাদ দিব সরাসরি অংশ নেন।

প্রাক্তন ফেডারেল মন্ত্রী এড হুসিক বলেন, ‘মানুষ এখন আর সহ্য করতে পারছে না শিশুদের ওপর এমন নির্মমতা। অস্ট্রেলিয়াকে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে এবং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য নয়, মানবতার জন্য।’

অভিবাসী নারী আবিব বলেন, ‘মানবতাই আমাদের এই ভয়ানক আবহাওয়াতেও পথে নামিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন অনেকেই জেগে উঠছে। যারা শুরুতে চুপ ছিল, এখন তারাও মুখ খুলছে।’

প্রতিবাদে বৈচিত্র্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বেচ্ছাশ্রমে বানানো প্ল্যাকার্ড, বৃদ্ধ দম্পতিরা হাঁটার লাঠি নিয়ে, এমনকি ‘গে জুইশ ফর গাজা (গাজার জন্য সমকামী ইহুদিরা)’ লেখা পোস্টার হাতে ব্রিটিশ একদল যুবকও অংশ নিয়েছিলেন।

আয়োজক জশ লিস বলেন, ‘এটা আমার কল্পনার থেকেও বড়। এটি মানবতার জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ। এখন রাজনীতিকদের মানুষের কণ্ঠ শুনতেই হবে, ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেই হবে।’

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার পিটার ম্যাককেনা সিডনিতে তার সময়ে দেখা সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ বলে বর্ণনা করেছেন।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

Leave A Reply

Your email address will not be published.