খুলনায় প্রেস সচিবকে আটকে রেখেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ও এনসিপির নেতা কর্মীরা
কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবি
র্দীঘ আড়াই ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর খুলনা প্রেস ক্লাব থেকে মুক্ত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শনিবার রাত সাড়ে ৮ টায় প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ও এনসিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি মুক্ত হন।
এর আগে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনা প্রেস ক্লাব পরিদর্শনে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে শফিকুল আলমকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহা নগরের সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর ,মূখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ,সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি , খুলনা জেলা সমন্ময় কমিটি কদরুল হাসান , সহকারী মূখপাত্র রুমি রহমান , যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিব রেজা, যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ সাইফুল্লাহ ,যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুল্লাহ গালীব , নাজমুল হাসান প্রমূখ।
গত ২৫ জুন থেকে কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল। তাদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্য উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাসকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তারা প্রতিবাদ জানিয়ে কমিশনারের অপসারণ দাবি করছে।
এই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুর ৩টা থেকে তারা কেএমপি হেড কোয়ার্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। পরে প্রেস সচিব শফিকুল আলমের খুলনায় উপস্থিতির খবর পেয়ে তারা খুলনা প্রেস ক্লাবে গিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘খুলনায় পুলিশলীগের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল, বহু অপকর্মের হোতা ও ছাত্র জনতাকে নির্যাতনকারী চার মামলার আসামি এসআই সুকান্তকে রাতের আঁধারে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে এই ঘটনার সূত্রপাত। তবে শুধু এটিই নয়, পুলিশ কমিশনারের সামগ্রিক কার্যক্রমে খুলনার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ।’
খুলনা প্রেসক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, এসআই সুকান্তকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কেএমপি কমিশনারের অপসারণের দাবিতে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করছে গত চারদিন ধরে। আজও (শনিবার) কেএমপি ঘেরাও করে তাদের আন্দোলন চলছিল। বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিব এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরমধ্যে আমরা জানতে পারি বাইরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ঘেরাও করেছে এবং প্রেস সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু উনি প্রথমে দেখা করতে না চাইলেও পরবর্তীতে নেমে এসে আন্দোলনকারীদের নিয়ে হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে যান। সেখানে বৈঠকে আশ্বস্ত করে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজনের ফোন নম্বর নিয়ে গেছেন তাদেরকে ফোনে জানাবেন।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা স্যারের [প্রেস সচিব] সঙ্গে কথা বলার জন্য অবস্থান করছিল। স্যার সময় দেওয়ায় তারা প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় কথা বলছেন। পরিস্থিতি শান্ত এখন হয়েছে।’
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আন্দোলনকারীরা চেয়েছে- তারা গত ৩/৪ দিন ধরে আন্দোলন করছে, আন্দোলনের বার্তা যেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছায়। সেটা তারা প্রেস সচিব স্যারকে সরাসরি বলতে চাচ্ছিল। আমি পরে গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বললাম, তাদের পাল্স বুঝার চেষ্টা করলাম। মূল চাওয়াটা ছিল তাদের প্রেস সচিব স্যার বার্তাটা যেন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে গিয়ে বলেন, বার্তাটা পৌঁছান। আন্দোলনকারীরা অনেকগুলো বিষয় বলে, প্রেস সচিব স্যার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি কথাগুলো বলবেন। তিনি বলেছেন আন্দোলনকারীরা যাতে ডিসি অফিসের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠান।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয়রা মারধর করে এসআই সুকান্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তবে সেদিন রাতেই তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে আবারও তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।