খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক যেন এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। খুলনা মহানগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার ‘জিরো পয়েন্ট’ থেকে শুরু করে ডুমুরিয়ার চুকনগর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ গর্ত ও উঁচু-নিচু অংশ। মাত্র সাড়ে চার বছর আগে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটিই এখন জনদুর্ভোগের নতুন নাম।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের অভিযোগ, সড়কের নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই এত দ্রুত ভেঙে পড়েছে সড়কটির অবকাঠামো। বর্তমানে কোথাও কোথাও পিচ তুলে ইট বিছানো হচ্ছে, যা জনগণের সঙ্গে প্রহসনের শামিল বলে মনে করছেন অনেকে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে খুলনার মধ্যে পড়েছে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে সড়কটির প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়, যার আওতায় রাস্তার প্রস্থ ১৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৬ ফুট করা হয়। তৈরি করা হয় আটটি কালভার্ট, ড্রেন ও বাসস্টপেজ। কাজটি ২০২০ সালের জুনে শেষ করে তৎকালীন প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মোজাহার এন্টারপ্রাইজ’। কিন্তু এক বছরের মাথায় সড়কটির অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে।
পরিবহন চালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, এই সড়কটি সংস্কার করার সময়ই সমস্যা ছিল। তখন দেখার কেউ ছিল না। ফলে এতো টাকা দিয়ে সংস্কার করেও লাভ হয়নি।
রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মো. রাসেল জানান, এখন কোন প্রাইভেট ওই রাস্তার যেতে চায় না। যেমন কাঁদা-মাটি, তেমন ধুলাবালি। আর ভাঙ্গা-চোরার কথাতো বলাই লাগে না। শুধু জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করে আর সরকারি টাকার শ্রাদ্ধ করা হয়।
খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বলেন, “বিগত সময়ে সড়কের ফাউন্ডেশন ভালো না হওয়ায় দ্রুত ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামতের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।”
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচল এবং সঠিক মান না থাকায় পুরো প্রকল্পের টেকসইতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন মালবাহী ট্রাক চলার কথা, সেখানে প্রতিদিন ৫০ মেট্রিক টনের ট্রাক চলাচল করছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, সড়কের দ্রুত মেরামত না হলে দুর্ঘটনা ও যানজট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই অবিলম্বে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।