দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে খুলনায় বড়দিন উদযাপন

43

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো ক্রিসমাস ডে, যা বড় দিন নামে পরিচিত। প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর এই বিশেষ দিনটি বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন অত্যন্ত আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকে। এই দিনে খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল, যাকে তারা তাদের ত্রাণকর্তা এবং শান্তির দূত হিসেবে মান্য করেন।

ক্রিসমাস ডে উদযাপন কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেও পরিচিত। বড়দিনের আগের রাত, অর্থাৎ ২৪শে ডিসেম্বরকে ‘ক্রিসমাস ইভ’ বলা হয়। এদিন থেকেই শুরু হয় আনন্দঘন মুহূর্ত। গির্জাগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা ও সান্ধ্য সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়। মানুষজন গির্জায় সমবেত হয়ে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে প্রার্থনা করেন। গির্জা, ঘরবাড়ি, অফিস ও বিভিন্ন স্থান আলোকসজ্জা এবং ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হয়।

বড়দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো “ক্রিসমাস ট্রি”। এটি হলো একটি চিরসবুজ গাছ, যা নানা রঙিন আলো, খেলনা, ফুল ও উপহার দিয়ে সাজানো হয়। গাছটি শান্তি, আনন্দ ও নতুন জীবনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। শিশুদের কাছে বড়দিনের বিশেষ আকর্ষণ হলো সান্তা ক্লজ। সান্তা ক্লজ তাদের কাছে একটি কল্পিত চরিত্র, যিনি এই উৎসবে লাল-সাদা পোশাক পরে শিশুদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন।

খুলনা শহরেও বড়দিন উপলক্ষে নানা আয়োজন হয়েছে। খুলনার বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরা অংশগ্রহণ করেন। গির্জাগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে এবং যিশু খ্রিস্টের জন্মগাথা পরিবেশিত হচ্ছে দিনব্যাপী। এছাড়াও খুলনার বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও সঙ্গীত পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে রাতে।

নগরীর টুটপাড়া খ্রিস্টার্ণপাড়ার তুফান গাইন জানান, এদিন খুলনার খ্রিস্টার্ণপড়ায় ঘরে ঘরে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা-পুলি, কেক, মিষ্টি, পোলাও এবং নানা রকমের সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে উপহার বিনিময় করা হচ্ছে, যা ভালোবাসা ও বন্ধনের নিদর্শন। বড়দিনের আনন্দ কেবল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, অন্যান্য ধর্মের মানুষজনও এতে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর চার্চের শুধাংশু মার্টিন দাস জানান, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, যিশু খ্রিস্ট মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তার আদর্শ ছিল শান্তি, মানবতা ও ভালোবাসার প্রচার। বড়দিনের মাধ্যমে এই শিক্ষাগুলো নতুন করে স্মরণ করা হয়।

খুলনার বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও শপিং মলে বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। আলোকসজ্জায় সজ্জিত রাস্তাঘাট, পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। স্কুল-কলেজগুলোতেও বড়দিন উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ হয়ে ওঠে।

সব মিলিয়ে, ক্রিসমাস ডে একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, যা ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়। খুলনার মানুষজনও এই আনন্দঘন উৎসবে সামিল হয়ে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে। যিশুর শিক্ষার আলোয় শান্তি ও মানবতার জয়গানই বড়দিনের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং তা পালনেই থাকে সকলের আনন্দ ও তৃপ্তি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.