কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার কয়রা উপজেলায় মুন্ডা জনগোষ্ঠীর শিশুদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার সুরক্ষায় এক ব্যতিক্রমী সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) এবং বেসরকারি সংস্থা পরিত্রাণ-এর ওয়াই মুভস প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে এই মুখোমুখি সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং এনসিটিএফ সদস্যরা তাদের মূল্যবান মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিংময় করেন।
এনসিটিএফ-এর কয়রা উপজেলা সভাপতি নমিতা মুন্ডা সভায় সভাপতিত্ব করেন, এবং পরিত্রাণ-এর প্রজেক্ট অফিসার মো. আলাউদ্দিন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার কর্মকার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রমনিয়াম, উপজেলা শিশু সুরক্ষা কোয়ালিশনের সভাপতি অধ্যাপক আ.ব.ম. আব্দুল মালেক, শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল এবং কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. রিয়াদ আলী। এছাড়াও, এনসিটিএফ সদস্য অনুপম মুন্ডা, ইষিতা মুন্ডা, অঞ্জনা মুন্ডা, এবং আরও অনেকে মুন্ডা শিশুদের পক্ষ থেকে তাদের বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
সংলাপে বিশেষ গুরুত্ব পায় মুন্ডা শিশুদের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
অনলাইন জুয়া ও মাদকাসক্তি: মুন্ডা শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনলাইন জুয়া ও মাদকাসক্তির প্রবণতা।
বাল্যবিবাহ ও ঝরে পড়া: শিক্ষার পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাল্যবিবাহ এবং স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি।
স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন: উপজেলা পরিষদে মা ও শিশুদের জন্য বিশেষ কর্নার স্থাপন, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য র্যাম্প ও সিঁড়ি নির্মাণ, এবং স্কুলে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহের দাবি ওঠে।
পরিবেশ ও জীবিকা: সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট নিয়েও আলোচনা হয়।
এনসিটিএফ সদস্যরা তাদের বক্তব্যে জানায়, মুন্ডা শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যাগুলো সমাধান করা কঠিন। উপস্থিত কর্মকর্তারা শিশুদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের আশ্বাস দেন।
এই সংলাপের মাধ্যমে কয়রার মুন্ডা শিশুদের জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জগুলো স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে, যা তাদের অধিকার নিশ্চিত করার পথে একটি নতুন পথ উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।