দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

সংবাদপত্রের কালো দিবস আজ

36

আজ ১৬ জুন, সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনেই গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে রেখেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাকশাল সরকার। সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাতারাতি বেকার হয়ে পড়েছিলেন কয়েক হাজার সংবাদকর্মী। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার।

সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের এই দিনটি ১৯৭৬ সাল থেকে সাংবাদিক সমাজ ‘সংবাদপত্রের কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। এ উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। অংশ নেবেন সাংবাদিক নেতা ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরাও।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের তিন বছর না যেতেই সংসদে আনা হয় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী, যা গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে ব্যাপক সমালোচিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৬ জুন ১৯৭৫ সালে বাকশাল সরকার সংবাদপত্র বন্ধের নির্দেশ দেয়। সাংবাদিকদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সংবিধানে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন। তিনি বাকশালের কালো অধ্যায় বাতিল করেন।

তবে সাংবাদিকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই তারা গণমাধ্যমকে টার্গেট করেছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও দলটি একই ধারা অব্যাহত রাখে। জনপ্রিয় সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল—যেমন: দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান এবং অনেক অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে শত শত সংবাদকর্মীকে বেকার করে দেয়।

সরকারি দমননীতির কারণে গণমাধ্যম হয়ে পড়ে নিস্তব্ধ, সাংবাদিকদের জীবন হয়ে ওঠে অনিরাপদ। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহু সাংবাদিক নিগৃহীত হন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ একাধিক কালাকানুন প্রণয়ন করে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

অন্যদিকে, দলীয় ঘরানার কিছু সাংবাদিক সরকারের তোষামোদে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর ফলে গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থা কমে যায়।

যদিও গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে আসে বলে দাবি করা হচ্ছে, তথাপি এখনো অনেক গণমাধ্যমে বিগত সরকারের দোসরদের প্রভাব বজায় রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে চাপ না থাকলেও অনেক গণমাধ্যম এখনও স্বপ্রণোদিতভাবে তোষামোদে লিপ্ত। ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে কিছু অনলাইন পোর্টাল, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

১৬ জুন তাই সাংবাদিক সমাজের কাছে শুধুই একটি দিন নয়—এটি এক গভীর বেদনা, প্রতিরোধ ও সচেতনতাবোধ জাগানোর দিন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও রক্ষার অঙ্গীকারে দিনটি পালিত হয়ে আসছে, থাকবে আগামী দিনেও।

Leave A Reply

Your email address will not be published.