মো. মোজাহিদুর রহমান, খুলনা: আজ পহেলা আষাঢ়। বাংলা বর্ষপঞ্জির বর্ষাকাল শুরু হলো আজকের এই দিন দিয়ে। সকালে ঘুম ভাঙতেই খুলনার আকাশে দেখা গেল মেঘের ঘনঘটা। চারদিক যেন ধূসর চাদরে মোড়ানো এক অদ্ভুত প্রশান্তির আবহে। দিনের শুরু থেকেই প্রকৃতিতে ছিল একধরনের নিরব উত্তেজনা—কখন যেন আকাশ ফেটে নামবে এক পশলা বৃষ্টি, সেই অপেক্ষা।
দুপুর গড়াতেই সেই প্রতীক্ষার অবসান। হঠাৎ করেই ঝমঝমিয়ে নামল বৃষ্টি। চারদিক মুহূর্তেই ভিজে গেল। রাস্তাঘাট, গাছপালা, ছাদ, জানালার কাচ—সবকিছু যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। খোলামেলা প্রান্তরে শিশুরা ছুটে বের হলো বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে, আবার অনেকেই জানালার পাশে বসে এক কাপ চা আর ভাজা মুড়ি নিয়ে উপভোগ করল বর্ষার প্রথম স্পর্শ।
আষাঢ় মানেই বাঙালির আবেগঘন এক ঋতুর সূচনা। কৃষকের জন্য এ মাস নতুন আশার বার্তা নিয়ে আসে। খেতের মাটি পানিতে নরম হয়, বীজ বপনের উপযুক্ত সময় আসে। গ্রামবাংলায় তাই পহেলা আষাঢ় মানে মাঠে মাঠে প্রস্তুতি, মাটির গন্ধে একধরনের উচ্ছ্বাস। শহরাঞ্চলেও আষাঢ়ের প্রভাব কম নয়—নালার জল, রাস্তায় ভাঙচুর, যানজট—সবকিছুর মাঝেও যেন লুকিয়ে থাকে একধরনের রোমান্টিকতা। খুলনার মতো উপকূলবর্তী শহরে আষাঢ়ের দিনগুলো আরও ভিন্ন স্বাদ নিয়ে আসে। নদীর পানি ফুলে ওঠে, মাছ ধরার প্রস্তুতি বাড়ে, এবং মাঝিদের মুখে হাসি ফোটে।
আষাঢ় মানেই কেবল বৃষ্টি নয়, এ ঋতু আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত ও চিত্রকলায়ও রেখেছে গভীর ছাপ। রবীন্দ্রনাথের “বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল” কিংবা জীবনানন্দের মেঘমালা—সবই আষাঢ়ের অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট। খুলনার আজকের আকাশে তাকালেই সেই কবিতার দৃশ্য যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে—একটা ঘন মেঘে ঢাকা দিগন্ত, মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমক, আর তার সঙ্গে একটানা বৃষ্টির ছন্দ।
আজকের পহেলা আষাঢ় তাই খুলনাবাসীর মনে এনে দিয়েছে বর্ষার প্রথম আবেশ। নতুন ঋতুর প্রতিশ্রুতি, প্রকৃতির নতুন রূপ, এবং সেই চিরন্তন বাঙালি রোমান্টিকতা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্কের কথা, যা যুগে যুগে নতুন করে জেগে ওঠে বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায়। যদিও সেই বৃষ্টির স্থায়ীত্ব ছিল ক্ষনিকের।
পহেলা আষাঢ় এসেছে, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে বৃষ্টির গান, মাটির গন্ধ, আর এক টুকরো ভালোবাসা।