যশোরের কেশবপুরে খাদ্যের সন্ধানে এলাকা ছাড়ছে কালোমুখো হনুমান এখন ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। দৈনিক খুলনা পত্রিকার কেশবপুর উপজেলা প্রতিনিধি হারুনার রশীদ বুলবুল তথ্যচিত্রে এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা যাওয়া করতেন। এসময় তাদের যানবাহনে করে দুইটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে এই হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শতশত হনুমানের বিস্তার লাভ করলেও কালের আবর্তে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে।
এক সময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন জঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও পাতালতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘন বসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইট ভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে যে খাদ্য সরবরহ করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এদিকে, কেশবপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় হনুমানের বিচরণ দেখে এলাকার মানুষ বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকেরা তাদেরকে বিরক্তসহ নাজেহাল করে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ার ফলে ওরা বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। ওদের রক্ষায় এখনি এগিয়ে না আসলে একদিন ওরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এক সময় কেশবপুরে শতশত কালোমুখো হনুমান দেখা গেলেও এক
পর্যায়ে সুযোগ পেলে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়।
এছাড়া এসব হনুমান কেশবপুর ছেড়ে অন্য এলাকায় গেলে ওরা বেশি দিন বেঁচে থাকে না। কারণ কেশবপুরের পরিবেশ ও আবাহাওয়ার সাথে ওইসব এলাকার আবহাওয়ার মিল না থাকায় ওরা মারা যায় বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, কেশবপুরের কালোমুখো হনুমান রক্ষায় দেশবিদেশের বিভিন্ন সংস্থা একাধিকবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও আজ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। কেশবপুরে হনুমানের বেশি বিচরণ রয়েছে, পৌর শহরের উপজেলা চত্বর, হাসপাতাল চত্বর, মধ্যকুল, ব্রহ্মকাটি, রামচন্দ্রপুর ও কেশবপুর সাহাপাড়া এলাকায়। এ অঞ্চলের বাইরে ওদের কম দেখা যায়। বর্তমানে খাদ্যের সন্ধানে ওরা বেশি বিচরণ করছে পৌর শহরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন ওদের কলা, বাদাম, পাউরুটি এবং বিস্কুট খেতে দেয়। ওই খাদ্যের লোভে ওরা শহরের পাড়া মহল্লায় বেশি বিচরণ করে। ওদের পছন্দের খাদ্যের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল, গাছের কচিপাতা ও কাঁচা এবং পাকাকলা ইত্যাদি।
কালোমুখ হনুমানদের অনুভূতি শক্তি প্রায় মানুষের কাছাকাছি। তাই মানুষের সঙ্গে রয়েছে ওদের বেশ সখ্যতা। এরা মানুষের কাছ থেকে বাদাম, কলা, রুটি ইত্যাদি নিয়ে খায় এবং বিনোদনও দেয়। এসময় ওদের উত্ত্যক্ত করলে কখনো কখনো হিংস্র হয়ে ওঠে। বিরক্ত না করলে ওরা রাগে না। কোন কারণে ওদের উপর হামলা করে – আহত করলে বিচারের দাবিতে ওরা থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়। এমন ঘটনা কেশবপুরে কয়েক বার ঘটেছে। সচেতনমহলের দাবি হনুমান রক্ষায় এখনি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে একদিন ওরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বন-জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, কেশবপুরের ঐতিহ্য এই বিরল প্রজাতির কালো মুখো হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।