ইকোন হালদার, মোরেলগঞ্জ: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে বাগেরহাটসহ ১০টি জেলায় ধানের পরেই দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে সুপারি। লাভজনক হওয়ায় প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারি চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এই সুপারি রপ্তানি হচ্ছে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে। প্রতিবছর এসব এলাকা থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাঁচা ও পাকা সুপারি রপ্তানি হচ্ছে।
সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলে সুপারির মৌসুম। মোরেলগঞ্জের সন্ন্যাসী, চন্ডিপুর, পত্তাশী, ঘোষেরহাটসহ বিভিন্ন হাটে প্রতি হাটে গড়ে ৫০ লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। এসব হাটে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে সুপারির জমজমাট বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও মহাজনেরা এখান থেকে সুপারি কিনে ট্রাক, লঞ্চ বা ট্রলারে করে চালান করেন ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায়।
চাষিরা জানান, এ বছর ফলন তুলনামূলক ভালো হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি কুড়ি (২২০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২২০ টাকা দরে। মৌসুমের শুরুতে এই দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। শুকনো সুপারির দাম মণপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
বৌলপুর বাজার, যেটি এলাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম সুপারির হাট, সেখানে প্রতি হাটে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার সুপারি কেনাবেচা হয়। এখানে হাট বসে সপ্তাহে দুই দিন—শনিবার ও মঙ্গলবার। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যেই ৯০% সুপারি বিক্রি হয়ে যায়। বাজারের পরিচিত ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিনি প্রতি বাজারে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার সুপারি কিনে থাকেন।
তবে, ২০২৪ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর আঘাতে অনেক সুপারি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছের মাথা ভেঙে ছড়া শুকিয়ে গেছে বলে জানান হোগলাপাশা ইউনিয়নের চাষিরা। এর ফলে চলতি বছরে সুপারির উৎপাদন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
মোরেলগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি জানান, হাটের সার্বিক পরিবেশ নিরাপদ থাকায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাবেচা করতে পারছেন। সুপারি চাষের খরচ তুলনামূলক কম এবং একবার ফল ধরলে প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়ায় এটি এখন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য অন্যতম ভরসার ফসল হয়ে উঠেছে।
ফলন কম হলেও, সুপারির বাজারমূল্য চাষিদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ও সরকারি সহায়তা। তাহলে ভবিষ্যতে এই রপ্তানিযোগ্য ফসল আরও বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য।