কেশবপুরে ইরি বোরো বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে হাসি
ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত স্বস্তিতে নেই কৃষক, আবাও ভালো থাকায় কৃষকরা মরিয়া ফসল ঘরে তুলতে, সুযোগ নিচ্ছে ধান কাটা কামলারা প্রতিদিন তাদের আয় একহাজার থেকে বারোশত টাকা
যশোরের কেশবপুরে ইরি বোরো বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে হাসি। ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত স্বস্তিতে নেই কৃষক। কেশবপুরে ইরি বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করার পর এখন ফসল কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা।পুরুষের পাশাপাশি নারীরা একাজে সহযোগিতা করছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবার কেশবপুর উপজেলায় ১২ হাজার ৯ শত ২০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা।
সরকারের দেওয়া বীজ,সার কৃষি অফিস থেকে ৪ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল । বুধবার ১৬ এপ্রিল দুপুরে ১২ টায় দৈনিক খুলনা পত্রিকার প্রতিনিধি হারুনার রশীদ বুলবুল কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে। জানা গেছে এক সময় এ এলাকার কৃষকদের ঘরে ঘরে গরু,জোয়াল এবং লাঙ্গলসহ কৃষি যন্ত্রপাতি ছিল। কৃষকের জমি চাষের সাথে গরু ও মহিষের সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে। সাধারণত কৃষি জমিতে গরু দিয়ে টানা লাঙ্গলে জমি চাষ ও মই দিয়ে চাষের জমি সমান করে ফসল লাগানো হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে এসে যোগ হয়েছে ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর। গ্রামাঞ্চলে কৃষকের বড় পরিচয় ছিল যার বাড়িতে গরু, লাঙ্গল ও মই আছে।
কথা হয় বোরো ক্ষেতে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করা প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ইরি বোরো চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি আশা রাখি লাভ বেশি পাবো। এভাবে জমি চাষাবাদ করে ছয় আট সদস্য পরিবারের সংসারের সারা বছরের যোগান দিতে হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় ইরি বোরো চাষ ছাড়া অন্য ফসল তেমন হয়।কাকিলাখালী গ্রামের কৃষক কনক বিহারি বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আমি ইরি বোরো চাষ করে ফলন ভালো পাওয়ায় আমি খুশি। আশা রাখি ৫ বিঘা জমিতে ১০০/১২৫ মন ধান পাবো। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন,তিনি ওই গ্রামের একজন ভালো কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরি-বোরো আবাদ করে আসছেন। এবারও তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় এলাকায় হালের বলদ না পাওয়ায় নিজেরা ক্ষেতের মই দিতে হয়েছে, কিন্তু ফলনভালো হওয়ায় আমার কোন কষ্ট নাই। ফতেপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুল্লাহ বলেন, আগে হাল চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষকের ঘরে গরু, লাঙ্গল ও মই থাকতো। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙ্গল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় কম কষ্টে ভালো ফলন পাওয়ায় আমি খুশি ।
ব্রহ্মকাটি গ্রামের কৃষক জামাল সরদার,হামিদ সরদার,আনিছুর সরদার,রামচন্দ্রপুর গ্রামের ময়েজউদ্দিন,আব্দুল সরদার,সুজাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান,বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সুজনসহ আরো অনেক কৃষকরা এ প্রতিনিধি কে জানান এবার ইরি বোরো চাষ করে খুব ভালো ফলন হয়েছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় আমরা ভালো ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে আমরা খুশি।
ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত স্বস্তিতে নেই কৃষক, আবাও ভালো থাকায় কৃষকরা মরিয়া ফসল ঘরে তুলতে, সুযোগ নিচ্ছে ধান কাটা পুরুষ কামলারা প্রতিদিন তাদের আয় একহাজার থেকে বারোশত টাকা। প্রতাপপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন, দেওলি গ্রামের আব্দুল মোমিন, হাসানপুর গ্রামের আফজাল হোসেন জানায় তাদের প্রতিদিনের আয়ের কথা। পিছিয়ে নেই নারী কামলারাও পুরুষ কামলাদের সাথে সাথে তারাও আয় করছে ৬/৭ শত টাকা। কথা হয় নারী কামলা রহিমা, হাজেরা, সালমা, পারভীনের সাথে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন এবার ১৪ হাজার ৪ শত ২৫ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিলো কিন্তু কিছু জমি জলবদ্ধতা থাকার কারণে এবারের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।