দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

বরেণ্য সাহিত্যিক আবদুল হাই মাশরেকী স্মরণ আলোচনা

35

গতকাল ১১ এপ্রিল ২০২৫ শুক্রবার বেলা এগারোটায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের পাঠচক্র প্রকল্প বীক্ষণ আসরে বরেণ্য সাহিত্যিক আবদুল হাই মাশরেকী স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ডেসটিনির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কবি ও গবেষক মাহমুদুল হাসান নিজামী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি অধ্যাপক নজরুল হায়াত, কবি অধ্যাপক গাউসুর রহমান, কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আসাদ উল্লাহ এবং আবদুল হাই মাশরেকীর সন্তান সাংবাদিক নাঈম মাশরেকী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব কবি অধ্যাপক সোহরাব পাশা। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন চৌধুরী।

অতিথি কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী বলেন, সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই। একজন সাহিত্যিক কালজয়ী সৃজনশীলতা সময়ের কাছে রেখে যান। আবদুল হাই মাশরেকী কালোত্তীর্ণ লেখা রেখে গেছেন- যা বাংলা সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ।তাঁকে নিয়ে অপরাজনীতি করা হয়েছে। সময় তার সদুত্তর দেবে নিশ্চয়ই।
কবি নজরুল হায়াত বলেন,রবীন্দ্রউত্তর তিরিশের কবিদের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম আধুনিক কবি আবদুল হাই মাশরেকী। তিনি একজন আধুনিক কবি হিসেবে লোক জীবনধারাকে উপজীব্য করেছেন সৃজনসুষমায়।
কবি গাউসুর রহমান বলেন,আবদুল হাই মাশরেকীর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম আমার তরুণ বেলায়।তিনি অত্যন্ত গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। সহজ-সরল জীবন যাপন করে গেছেন আমৃত্যু। তৃণমূল মানুষের সাথে মিলেমিশে একাকার হতে পেরেছিলেন বহুমাত্রিক এই লেখক। পুরস্কার প্রাপ্তির জটিল পথ অনুসরণ করেননি তিনি। তাঁকে সম্মানিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং দায়।

কবি ও প্রাবন্ধিক আসাদ উল্লাহ বলেন,গুণীর এ জাতি আজও সঠিকভাবে করতে জানে না বলেই আবদুল হাই মাশরেকীর মতো মহৎপ্রাণ সাহিত্যিকরা অবহেলিত থেকে যান। তাঁর উত্তরসুরি হিসেবে এ দায় আমাদেরও।

এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক জিয়া উদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আবদুল হাই মাশরেকীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব এ গুণী মানুষ সম্মাননা জানিয়ে ছিলো, আমি তার প্রস্তাবক ছিলাম। এতো কাল পরে হলেও অন্তত মরোণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদক প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি।

ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী প্রারম্ভিক বক্তব্যে আবদুল হাই মাশরেকীর বিশদ বৃত্তান্ত তুলে ধরে সময়োচিত করণীয় নিয়ে সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, একজন আবদুল হাই মাশরেকী সময়োত্তীর্ণ প্রতিভা,মহৎপ্রাণ সৃজন ও মননশীলতায় পরিপূর্ণ সব্যসাচী লেখক। সময় এসেছে তাঁর দায়িত্ব উত্তরসূরীদের পালন করার মধ্যদিয়ে দায়মুক্ত হবার।পল্লী কবিখ্যাত জসিম উদ্দিন কিংবা বন্দে আলী মিয়ার মতো যে লোকজ জীবনধারার বোধকে বরেণ্য সাহিত্যিক আবদুল হাই মাশরেকী স্বকীয় শৈলীতে যেভাবে তুলে ধরেছেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য সম্পদ।কিন্তু তিনি আজও রাষ্ট্রীয় পদক পাননি।যা আজ সময়ের দাবি। রাষ্ট্রের সকল প্রকার পদকপ্রাপ্তির মহান যোগ্যতা তাঁর আছে। আসন্ন দ্রুততম সময়ে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে তাঁর চেতনার উত্তরাধিকারীদের এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করার প্রতিও আহবান জানান।

কবি আবদুল হাই মাশরেকীর সন্তান সাংবাদিক নাঈম মাশরেকী বলেন, আমার বাবা শুধু আমার বাবা, কিন্তু তাঁর সাহিত্য-সংস্কৃতির কিংবা সামাজিক অবদানের জন্য তিনি সবার।
আবদুল হাই মাশরেকীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ,তাঁর মৃত্যুর পর জাতীয় গণমাধ্যম রেডিও-টেলিভিশনে নিয়মিত যে প্রোগ্রাম করতো, পরবর্তী সময়ে একদল সাহিত্য সংস্কৃতিকর্মী, সংগঠক এবং সরকারের ছায়াপুষ্টরা কান ভারী করে তা বাতিল করে দেয়।
আমার বাবা আবদুক হাই মাশরেকী বলতেন,পল্লীর ভাণ্ডার আমার কাছে আছে।তা সবার হোক।অথচ তাঁর লেখা অন্যরা চুরিও করেছেন এবং তাকে ভুল ব্যাখ্যা করেছেন।
আব্বাস উদ্দিন, আবদুল আলীসহ বরেণ্য গায়ক শিল্পীরা তাঁর গান করেছেন। কবিতা, গান রচনা ও গানের সুর,জারী,গল্প,পালাগান, নাটক,প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন।তার লেখা কথা বলে,সময়ের কথা বলে। কিন্তু কোন সম্মাননা-পদক পাননি,এটা আমাদের দুঃখের কারণ এই জন্যে তাঁর মতো বরেণ্য ব্যক্তি উপেক্ষিত থাকা মানে সমাজই উপেক্ষিত হওয়া। আপনারা আব্বার উত্তরাধিকার হিসেবে, সমাজের অগ্রসর কণ্ঠস্বর হিসেবে তাঁর সম্মানের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন,এই প্রত্যাশা করছি।
বিভিন্ন সময় সমাজের কুটিল ব্যক্তিবর্গ তাকে নেতিবাচক ট্যাগ লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করেছেন। তাই তাঁর পদকপ্রাপ্তি হয়নি।

সভাপতির বক্তব্যে কবি সোহরাব পাশা বলেন, আবদুল হাই মাশরেকী কালজয়ী প্রতিভা, অসাধারণ ব্যাক্তি মানস তাঁর। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ।সাধারণ, সাধাসিধে নিরহংকার ছিলেন। তাঁর সান্নিধ্যে আলোকিত হয়েছি।তাঁর ছিল নিজস্ব স্টাইল, ছিল স্বকীয় অসাধারণ সৃজনশীল রীতি,ছিল আধুনিক মননশীলতা। তিনি তার তিনকালকে ধারণ করেছেন।যার জন্য সমকালে অত্যন্ত গ্রহণীয়,অনুসরণীয় তিনি।

আবদুল হাই মাশরেকীর কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন শেখ মাহবুব এবং টিপু চৌধুরী,স্বর্ণা চাকলাদার,জিসি দেব প্রমুখ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন বিমল পাল,কাজী আলমগীর, পঙ্কজ পাল, জালাল উদ্দীন প্রমুখ।।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বীক্ষণ আহবায়ক জুবায়েদ ইবনে সাঈদ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.