দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে বিশ্ববাজারে ধস, অর্থনীতিতে দুর্যোগের শঙ্কা

27

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ঘিরে বিশ্ববাণিজ্যে নেমে এসেছে বড় ধরনের অস্থিরতা। বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া ঘোষণার পরপরই বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আগ্রাসী নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে।

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সব ধরনের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বসবে। তার দাবি, এতে ফেডারেল রাজস্ব বাড়বে এবং স্থানীয় শিল্পায়ন গতি পাবে। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রভাব হতে পারে সম্পূর্ণ বিপরীত—মূল্যস্ফীতি বাড়বে, ভোক্তা ব্যয় কমবে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।

ঘোষণার পরদিনই (বৃহস্পতিবার) এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৪.৮% পড়ে যায়, যা করোনা মহামারির পর সর্বোচ্চ। প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্য হারিয়েছে মার্কিন শেয়ারবাজার। একইভাবে, ডাও জোন্স ৪% এবং প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক সূচক প্রায় ৬% নিচে নেমেছে।

এই ধস ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলেও। জাপানের নিকেই সূচক কমেছে ২.৭%, অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচক কমেছে ১.৬%, লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক পড়েছে ১.৫%।

শুল্কনীতির সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভোক্তাপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। নাইকি, অ্যাপল ও টার্গেটের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ৯% বা তারও বেশি দর হারিয়েছে। ইউরোপে অ্যাডিডাস, পুমা, হার্লি-ডেভিডসন, পানডোরা এবং এলভিএমএইচও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এছাড়া, শুল্কের প্রভাব সরাসরি পড়েছে কর্মসংস্থানের ওপরও। গাড়ি নির্মাতা স্টেলান্টিস ইতিমধ্যে মেক্সিকো ও কানাডায় তাদের কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রেই ছাঁটাই হয়েছে প্রায় ৯০০ কর্মী।

চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর যথাক্রমে ৫৪% ও ২০% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি এসেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কানাডা ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত যানবাহনের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করবে।

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ট্রাম্পের নীতিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছে এবং আশঙ্কা করছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে ১% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতেও ট্রাম্প আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, “সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। এটা অনেকটা অস্ত্রোপচারের মতো—ব্যথা লাগবে, কিন্তু পরে ভালো হবে।” তিনি আরও বলেন, “বাজার বুম করবে, দেশ বুম করবে।” তবে তার উপদেষ্টাদের অনেকেই স্বীকার করছেন, এটি কৌশল নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি নীতির অংশ। যদিও ট্রাম্প জানিয়েছেন, যদি কোনো দেশ ‘অসাধারণ কিছু’ দিতে পারে, তবে আলোচনা হতে পারে। বাজার ধসের সময় স্বর্ণের দাম বেড়ে একপর্যায়ে প্রতি আউন্স ৩,১৬৭.৫৭ ডলারে পৌঁছায়, যা নতুন রেকর্ড। অন্যদিকে, মার্কিন ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে অন্যান্য মুদ্রার তুলনায়।

বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান প্রিন্সিপাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, ইউরোপে প্রবৃদ্ধি ১% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাদের প্রধান কৌশলবিদ সিমা শাহ বলেন, “শিল্প খাত পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্য থাকলেও, তা বাস্তবায়নের আগেই অর্থনীতি ধাক্কা খাবে।”

ফ্রিডম ক্যাপিটাল মার্কেটস-এর জে উডস মন্তব্য করেন, “খুচরা বিক্রেতারা ধ্বংসের মুখে পড়েছে। সামনে আরও বড় অস্থিরতা আসতে পারে।” ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি বিশ্ববাণিজ্যের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা এখনই বলা কঠিন হলেও—প্রাথমিক লক্ষণেই বৈশ্বিক অর্থনীতি যেন কাঁপতে শুরু করেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.