দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

৫০ কোটি টাকার নির্মাণকাজে নয়ছয়

8

এম সাইফুল ইসলাম: খুলনা সড়ক বিভাগের অধীনে কয়রা-নোয়াবেকি-শ্যামনগর মহাসড়কে নির্মাণকাজে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সড়কের দুই পাশ ধসে গেছে। কয়েকটি স্থানে কার্পেটিংও দেবে গেছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই এমন অবস্থায় সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর।

জানা যায়, ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়ক নির্মাণকাজে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর দরপত্র আহবান করা হয়। প্রায় ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের নামে কাজের ওয়ার্কঅর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কাজটি তাদের কাছ থেকে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি এমএ নাসিমের কাছে টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে শেখ বাড়ির প্রভাব বিস্তার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। ফাইনাল বিলও প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক বিল প্রদানও করা হয়। তবে পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা তসলিম আহমেদ আশা ও নাসিম আত্মগোপনে থাকায় আব্দুস সালাম নামের তৃতীয় আরেক ব্যক্তি দায়সারাভাবে কাজ করছেন। প্রকল্পে কাজে না করেই বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষর দাবি ফাইনাল বিল প্রস্তুত করা হয়েছে, যা এখনো দেয়া হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিন দফায় কাজ বিক্রি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ হলেও প্রকল্পের কাজ হচ্ছে দায়সারা। জেলা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রকল্প তদারকিতেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখা গেছে। ফলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত কাজ হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, সদরের মধুর মোড় থেকে বেদকাশি দীঘিরপাড় পর্যন্ত সড়কের নির্মাণকাজের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর পরের এক কিলোমিটার অংশে বালি ভরাটের কাজ চলছে।

তবে ব্রিজ/ পোল এর ঢালাইয়ে পাথরের ভিতরে ডাস্ট এর মিশ্রণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েক স্থানে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি ও দোকানপাট রেখে কাজ চলছে। কয়েকস্থানে মাটি ভরাট করায় সড়কের পাশের প্যারাসাইডিং (মাটির সাপোর্ট) হেলে পড়তে দেখা গেছে। ২ নম্বর কয়রা কালভার্টের পর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় সড়কের দুই পাশে দেবে গিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়েছে। সড়কের তলায় মাটি ও বালুর মিশ্রণ বেশি ব্যবহার করেছেন। প্রজেক্টের বালি ভরাট করার পর লোকাল পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় সেই বালু বিক্রি করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ডিপার্টমেন্ট থেকে সার্ভেয়ার দ্বারা যে চিহ্ন দেওয়া লেভেল/ রাস্তার উচ্চতা সঠিক নেই। স্থানীয়দের জায়গা থেকে মাটি তুললেও তারা সঠিক মূল্য পায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা রহিম বলেন, সড়কটি পুনর্র্নিমাণের কথা থাকলেও সে নির্দেশনা মানা হয়নি। পুরাতন সড়কের উপরেই নতুন করে কার্পেটিং হয়েছে। কিছু স্থানে পুরোনো কার্পেটিং তুলে ফেলা হলেও নিচের বালু ও খোয়া সরানো হয়নি। তা ছাড়া বিটুমিন, পাথরের মান ও মিশ্রণ ভালো না হওয়ায় সড়কটি বেশিদিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তায় সড়ক বিভাগের কোন কর্মকর্তা আসে না, ভালভাবে পরিস্কার না করেই তার ওপর কার্পেটিং করা হচ্ছে। কার্পেটিংয়ে নিম্নমাণের বিটুমিন ব্যবহার ও পরিমানে কম দেয়া হয়েছে। যে কারণে কার্পেটিং কাজের দু’দিন পরেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন, কন্টাক্ট ডিভিশন বলছে স্থানীয়রা মাটি দিতে চায় না, তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাটি দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে জমি কিনেছে, আর প্যারাসাইডিং এর ব্যাপারে পুরাতনটা রাখাই যাবে না সেটা রাখলে আরো সমস্যা, তবে দুইটা ইস্যু খুব সিরিয়াস সেটা পাথরের ডাস্ট ব্যবহার ও ঢালাইকাজে লবণপানির ব্যবহার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.