দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

খুলনার রাজনীতি: জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা ও সম্ভাব্য প্রভাব

17

মোঃ মোজাহিদুর রহমান:
খুলনা, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। যার রাজনৈতিক পরিবেশ প্রায়শই জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা সামনে রেখে, খুলনার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যাদের রাজনৈতিক শক্তি গত কয়েক বছর ধরে কমে এসেছে, তারা আবারও নিজেদের উপস্থিতি ঘোষণা করছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনায় তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। যা রাজনৈতিক মহলে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। আজ খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে জামায়াতের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বিকাল ৪টায়। এই পরিস্থিতিতে এই আয়োজন খুলনার রাজনীতির জন্য একটি নতুন দিক নির্দেশক হতে পারে। যা পরবর্তী নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।

জামায়াতের পুনর্জাগরণ
যতদূর জানা যায়, জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালের পর থেকে কার্যত নিষিদ্ধ অবস্থায় ছিল। নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিলও করে। পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দমনমূলক কর্মকা- পরিচালনা করা হয়। এর ফলে তারা ভোটারদের কাছে একেবারে ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল। যদিও মানুষের মনে তারা জীবীত ছিল। তবে, এবার তাদের প্রার্থী ঘোষণা এবং রাজনীতি পুনরায় সক্রিয় করার প্রচেষ্টায় দেখাচ্ছে যে, জামায়াত এখনও তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নয় সারা দেশেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পুনজাগরণ হয়েছে। নব উদ্যোমে এগিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠন। বলিষ্ট নেতৃত্ব আর দায়ীত্বশীলদের সৎ গুণাবলি ও সাহসিকতা মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করছে। জামায়াতের নেতৃত্ব দেওয়ার কলা কৌশল অন্যদের কাছে শিক্ষনীয় বলে মনে করে অনেকে। অন্যদিকে জামায়াতের খালেদা-ভক্তি ও ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুগত একটি বৃহৎ জনগণ রয়েছে। তাদের এই জনগণের মধ্যে খুলনা, বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট ভিত্তি রয়েছে। জামায়াতের উদ্দেশ্য কেবল জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা নয় বরং তাদের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ এবং ইসলামী মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে সমর্থকদের একত্রিত করা।

খুলনার রাজনীতির প্রতি প্রভাব
খুলনার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাধারণত দেশব্যাপী আলোচিত বিষয় হয়ে থাকে। এখানে বিএনপির একক অধিপত্ত দেখা দেছে। যদিও ফ্যাসিষ্ট হাসিনার আমলের বিষয়টি ছিল ভিন্ন অভিজ্ঞতা। তবে জামায়াতের পুনঃজাগরণ খুলনার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। খুলনার বেশ কিছু এলাকায় জামায়াতের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং তাদের পুনরায় মাঠে নামার ফলে রাজনৈতিক মঞ্চে তৃতীয় একটি শক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া, জামায়াতের এই রাজনৈতিক সক্রিয়তা বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে পারে। তাদের সমর্থকরা যদি খুলনায় শক্তিশালীভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় তবে এটি স্থানীয় নির্বাচনী ফলাফলেও প্রভাব ফেলতে পারে।

দলীয় সমীকরণ ও নির্বাচনী কৌশল
এখন প্রশ্ন ওঠে, জামায়াতের এই কৌশল কীভাবে দলীয় সমীকরণে প্রভাব ফেলবে? ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির জন্য জামায়াতের শক্তি তাদের নির্বাচনী কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে। মনে করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াত তার সাংগঠনিক শক্তি হারিয়েছিল, কিন্তু ২০২৫ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তাদের গোপন শক্তির ফিরে আসা যে কোনও দলকে অসন্তুষ্ট করতে পারে। যদি জামায়াতের প্রার্থী খুলনায় শক্তিশালী হয় তাহলে তারা স্থানীয় ভোটারদের একটি (অন্যদলের) অংশ টেনে আনতে সক্ষম হবে। যা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

অন্যদিকে জনশ্রুতি রয়েছে, বিএনপি তাদের নিজেদের নির্বাচন কৌশল তৈরি করতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুত। যদি জামায়াত তাদের নির্বাচনী প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হয় তবে তাদের পক্ষ থেকে একটি জোট অথবা কিছু ধরনের সমঝোতা হতে পারে। এক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা কোন দল করবে, তা রাজনৈতিক জটিলতা বাড়াতে পারে।

জামায়াতের আদর্শ এবং খুলনার সমাজ
জামায়াতের রাজনৈতিক আন্দোলন মূলত ইসলামী আদর্শের উপর নির্ভরশীল। খুলনার বেশ কিছু এলাকার জনগণ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অধিক মনোযোগী। যা জামায়াতের প্রার্থীদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই ধর্মীয় সংবেদনশীলতা অনেক সময় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত যখন দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ভাঙন ঘটে।
তবে, জামায়াতের কর্মকা- শুধুমাত্র ধর্মীয় মূল্যবোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা সামাজিক সেবা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। জামায়াতের কর্মসূচি যদি খুলনায় ইতিবাচকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তাদের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে।

ভবিষ্যতের পরিণতি
জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা এবং খুলনায় তাদের সমাবেশের আয়োজন রাজনৈতিক দিক থেকে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করেন খোদ খুলনার মানুষ। যদি তারা নির্বাচনী মাঠে প্রবলভাবে অংশ নেয়, সেক্ষেত্রে এটি খুলনার রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। জামায়াতের পুনঃপ্রবেশ শুধু খুলনার নির্বাচনী ফলাফলকেই প্রভাবিত করবে না বরং এটি জাতীয় পর্যায়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির সম্ভাবনাও সৃষ্টি করবে।

এটা বলা কঠিন যে জামায়াত তার লক্ষ্য পূরণে সফল হবে কিনা। তবে এ কথা বলা যায়, তাদের প্রার্থী ঘোষণার সঙ্গে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা খুলনার রাজনীতিতে একটি নতুন রূপ নিতে পারে। সময়ই বলে দেবে যে, বসন্তের এই সূচনা খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে।
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট)

Leave A Reply

Your email address will not be published.