দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

‘থার্ড ডিগ্রি’ দেওয়া সোনালী সেন খুলনার মহিলা ক্রীড়া সংস্থার এ্যাডহক কমিটিতে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের উস্ময় প্রকাশ

86

ক্রীড়া প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে মাঠে সক্রিয় থাকা ও বিএনপি নেতাকে হত্যায় অভিযুক্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোনালী সেনকে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার এ্যাডহক কমিটিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও জেলার ক্রীড়াঙ্গনের খেলোয়াড় সংগঠকরা।

জানা যায়, গত ২১ আগস্ট প্রজ্ঞাপনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ক্রীড়া সংস্থা ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙ্গে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)।

এরপর এ্যাডহক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলে খুলনার মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ১৫ সদস্যদের এ্যাডহক কমিটির নাম প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসকের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা গত ৫ ডিসেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বরাবর কমিটিতে প্রস্তাবিত নামের তালিকা পাঠানো হয়।

কমিটিতে পদাধিকার বলে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন জেলা প্রশাসকের পত্নী। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিন, সদস্য সচিব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক সাহারা বানু তালিকায় জায়গা পেয়েছেন।

প্রস্তাবিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে (পদাধিকার বলে) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ফোর্স) সোনালী সেনের নাম পাঠানো হয়েছে।

তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে ৩ জুন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগদান করেন সোনালী সেন। তিনি কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি র‌্যাবের সদর দপ্তরে দায়িত্বরত রয়েছেন। আওয়ামী সরকারের সময়ে বিএনপি-জামায়াত দমনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিলো তার। বিএনপি নেতা বাবুল কাজী হত্যাসহ একাধিক মামলা চলমান রয়েছে সোনালী সেনের বিরুদ্ধে। জানা যায়, গত সংসদ নির্বাচনে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনের পরও খুলনার দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে রাতভর থানায় নির্যাতন চালিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত আট ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। এ সময় তিনি বলেন, হাইকোর্ট থেকে সকল মামলায় আগাম জামিন নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে দৌলতপুর থানা পুলিশ। এরপর তাকে ৬ জানুয়ারি রাতে দৌলতপুরের পাবলা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মশার কয়েল থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। পরে অমানুষিক নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে হত্যার হুমকি দিয়ে পুলিশের শেখানো স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে।

দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেন বলেন, সারা রাত নির্মম নির্যাতন করার পর সকালে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তখন সোনালী সেন তাকে কটাক্ষ করে বলেন, কিরে সারারাত থার্ড ডিগ্রি কেমন হলো?

এদিকে কমিটিতে সোনালী সেনের নাম প্রস্তাব করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা যুগ্ম আহবায়ক মহরম হাসান মাহিম। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় আওয়ামী লীগের দোসর সোনালী সেনের নাম থাকবে এটা বিস্ময়কর। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি হত্যা মামলা চলমান রয়েছে। অনতিবিলম্বে তার নাম প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও যুগ্ম আহবায়ক সাদিয়া আফরিন জানান, সোনালী সেনের বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে কমিটির সংশোধিত সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও রয়েছেন সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস, মহিলা দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন, ক্রীড়া সংগঠক তানজিমা জেসমিন, ক্রীড়ানুরাগী বেগম রেহেনা ঈসা, আজিজা খানম এলিজা, তসলিমা খাতুন ছন্দা, শাহনাজ আক্তার, মুন্নি জামান, ক্রীড়া শিক্ষক রেহানা পারভীন, রোভার স্কাউট তহমিনা আক্তার তমা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.