এম সাইফুল ইসলাম : ধর্নাঢ্য পরিবারে কার্ড বিতরণ, এক পরিবারে একাধিক কার্ড ও মোবাইল নম্বরের সাথে নামে অমিলসহ বিভিন্ন কারণে খুলনায় ৩৫ হাজার টিসিবি কার্ড (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ‘নিয়মবহির্ভূত’ চিহ্নিত হয়েছে। প্রথম দফায় যাচাই বাচাই শেষে ৫০ হাজার ডিজিটাল কার্ড প্রস্তুত করা হয়। যাদের গত দুই দিন ধরে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনি ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
জানা যায়, খুলনা নগরীতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে পন্য মূল্যর বিক্রির জন্য বিগত দিনে প্রায় ৮৫ হাজার কার্ড বিতরণ করা হয়। ৫ আগষ্টের পর এইসব কার্ড পুনরায় যাচাই বাছাই শুরু হলে বড় একটি অংশ নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় বাদ পড়েন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসব পরিবার কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ফলে আগষ্টে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাংক তৈরি, ধর্নাঢ্য প্রভাবশালী পরিবারে কার্ড বিতরণ, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা, একই পরিবারে একাধিক কার্ড, মোবাইল নম্বরের সাথে নামে অমিলসহ ‘নিয়মবহির্ভূত’ কার্ড বিতরনের প্রমান পাওয়া যায়।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত দিনে খুলনায় মোট ৮৫ হাজার কার্ড বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে অনিয়মের মাধ্যমে যাদের কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রায় ৩৫ হাজার তালিকা থেকে বাদ গেছেন। টিসিবির যুগ্ম পরিচালক ও খুলনা অফিস প্রধান মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, খুলনা নগরীতে স্মার্ট কার্ডের আওতায় ৫০ হাজার পরিবারকে টিসিবির মালামাল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পূর্বের বাকি ৩৫ হাজার কার্ড যাচাই বাচাই চলছে।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০২৪ সালের অক্টোবরে সাময়িকভাবে ট্রাক সেল শুরু হয়। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চলে। এরপর সাময়িক স্থগিত থাকার পর পুনরায় টিসিবি কার্যক্রম শুরু হয়। জানা যায়, পরিবার কার্ডের মাধ্যমে একজন ক্রেতা মাসে সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারেন।
কর্মকর্তারা জানান, দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী অসহায় মানুষের জন্য সাশ্রয় মূল্যে নিত্য পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবি স্মার্ট কার্ড বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। টিসিবি ‘ফ্যামিলি কার্ডকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজন্য অনলাইন আবেদন করতে প্রয়োজন হবে- নিজের এনআইডি, নিজের এনআইডি দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা মোবাইল ১টি সচল মোবাইল নাম্বার, বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি, অবিবাহিত ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার এনআইডি, বিধবা/তালাকপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে রয়েছেন। এ অবস্থায় টিসিবি কর্মসূচি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। উল্টো এসব কর্মসূচি বন্ধ বা আওতা কমানোর ফলে গরিব মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
এদিকে টিসিবি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে খুলনার বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার পতনের পরবর্তী সময় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১ টি ওয়ার্ডে টিসিবি পণ্য বিতরণ কার্যক্রম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনার ছাত্রদের স্বেচ্ছামূলক অংশগণের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা এবং নাগরিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্ররা একনিষ্ঠভাবে টিসিবির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে টিসিবি স্মার্ট কার্ড বিতরণ বিষয়ক বিভিন্ন জটিলতা প্রতীয়মান হয়েছে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত টিসিবি স্মার্ট কার্ডের পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জনসাধারণের নিকট বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। উক্ত জটিলতার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত টিসিবি সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিকটস্থ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট হতে পরামর্শ অথবা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়।