দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

৪২ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ইতিহাস গড়লেন আফরোজা!

প্রথম ডিসি থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার ইতিহাসের প্রধান সারথিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

30

আসাদুজ্জামান সরদার: ১৯৮৪ সালের ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা মহকুমা জেলায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে শুরু হয় এক গৌরবময় প্রশাসনিক পথচলা। দীর্ঘ ৪২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২২ জন পুরুষ কর্মকর্তা জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

শনিবার (৮ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সেই ইতিহাসেই যুক্ত হলো নতুন এক মাইলফলক হিসেবে পাবনার ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আফরোজা আখতারের নাম।

 

যিনি জেলার ইতিহাসে প্রথম নারী জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মুস্তাক আহমেদকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব যুগ্মসচিব হিসেবে পদায়ন করেছে সরকার।

 

এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার প্রশাসনিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। তবে এর শেকড় খুঁজে পাওয়া যায় চার দশক আগে, যখন জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মো. আমিনুর রহমান।

 

তিনি ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন এবং ৪ জুন ১৯৮৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক কাঠামো ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের ভিত্তি গড়ে ওঠে।

 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার প্রশাসনিক যাত্রা ১৯৮৪ সালে শুরু হলেও এ জেলার ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশাসনের ভূমিকা আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সাতক্ষীরার প্রথম ডিসি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে যাঁরা জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বভার বহন করেছেন, তাঁদের তালিকা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো

 

মো. আমিনুর রহমানের পর খন্দকার শহিদুল ইসলাম ৪ জুন ১৯৮৫ থেকে ২৫ জুলাই ১৯৮৭ পর্যন্ত জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। তার পর দায়িত্ব নেন ভূঁইয়া রফিকউদ্দিন আহমেদ, যিনি ২৫ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ৭ জুলাই ১৯৯০ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

কাতেবুর রহমান ৭ জুলাই ১৯৯০ সালে যোগ দিয়ে ১৭ আগস্ট ১৯৯২ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। তার পর মুজিবুর রহমান ১৭ আগস্ট ১৯৯২ থেকে ৪ জানুয়ারি ১৯৯৫ পর্যন্ত সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

১৯৯৫ সালের ১৯ জানুয়ারি দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ আব্দুল সালাম। তিনি ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর দেবব্রত খীসা ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ থেকে ১১ আগস্ট ১৯৯৮ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

সায়ফুল আলম ১১ আগস্ট ১৯৯৮ থেকে ২ এপ্রিল ২০০০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার পর দায়িত্ব নেন মো. আব্দুল মতিন চৌধুরী, যিনি ২ এপ্রিল ২০০০ থেকে ১২ জানুয়ারি ২০০৩ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন।

 

এরপর এ.ওয়াই.এম একরামুল হক ১২ জানুয়ারি ২০০৩ থেকে ১৯ জুলাই ২০০৪ পর্যন্ত, মো. ইলিয়াস ১৯ জুলাই ২০০৪ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত এবং এবিএম সিরাজুল হক ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থেকে ১৯ নভেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

 

২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ৩১ আগস্ট ২০০৮ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। তার পর মিজানুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ থেকে ২০ এপ্রিল ২০০৯ পর্যন্ত সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

পরবর্তীতে মো. আব্দুল সামাদ ২০ এপ্রিল ২০০৯ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত জেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।

 

নাজমুন আহসান ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ছিলেন। এরপর আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ৬ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার পর মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন ৬ মার্চ ২০১৮ থেকে ৯ অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর এস এম মোস্তফা কামাল ৯ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ১০ মে ২০২১ পর্যন্ত সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

এরপর হুমায়ুন কবির ১০ মে ২০২১ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন মুস্তাক আহমেদের কাছে, যিনি বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে পদায়ন করেছে সরকার।

 

এছাড়া জেলা প্রশাকের ওয়েব সাইটে এক নম্বরে এসডিও হিসেবে নবাব আব্দুল লতিফের নাম এর পর দ্বিতীয় এসডি হিসেবে ১৯০৯ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৯১১ সালের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন অক্ষয় কুমার স্বর এবং ১৯৮৪ সালে২৫ ফেব্রুয়ারী জেলা হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪৯ তম এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম.এ শুকুর।

 

বর্তমান জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার সাতক্ষীরার প্রশাসনিক ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক। প্রথম নারী হিসেবে এই পদে আসীন হওয়া তার জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি জেলার নারী নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন মহল আশা করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.