দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

৩৩ বছর পর আজ জাকসু নির্বাচন

15

৩৩ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—জাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর আয়োজিত এই নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। শিক্ষার্থীরা এবার আটটি ভিন্ন প্যানেলে ভাগ হয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছেন—এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ইসলামী ছাত্রশিবির, বাম সংগঠন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অন্যান্য দল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, মোট ভোটার সংখ্যা ১১,৮৯৭ জন এবং প্রায় ৫৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১০২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২১টি আবাসিক হলে মোট ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে—ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ১০টি হলে ভোটকেন্দ্র। প্রত্যেক হলে একজন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়াও থাকছেন ৬৭ জন পোলিং অফিসার ও সমসংখ্যক সহকারী কর্মকর্তা। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। সিসি ক্যামেরায় নজরদারি ছাড়াও মোতায়েন থাকবেন প্রায় ১,২০০ পুলিশ সদস্য। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতিও রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদা পোশাকেও সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্য সচিব।

এবারের জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও আলোচনার ঝড়। কেউ কেউ মনে করছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের জয়ের প্রভাব জাকসু নির্বাচনেও পড়তে পারে। জাকসুতে শিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর নেতারাও আশাবাদী, ডাকসুর বিজয়ের ধারা এখানে অব্যাহত থাকবে। তাদের ভাষ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়েই তারা এগিয়ে চলেছেন এবং জনপ্রিয়তার পেছনে কাজ করছে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি।

তবে সব ছাত্রছাত্রী বিষয়টি একইভাবে দেখছেন না। দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা জাহান তিথি মনে করেন, জাবির প্রেক্ষাপট ঢাবি থেকে আলাদা। শুধু হলে অবস্থানকারী নারী শিক্ষার্থীদের উপর ভিত্তি করে কোনো বিশেষ চিন্তা-ভাবনা করা সঠিক হবে না, কারণ জাবির বহু ছাত্রী আছেন যারা কেবল ক্লাস, ডিপার্টমেন্ট আর নিজস্ব জগতে সীমাবদ্ধ থাকেন। প্রার্থীদের প্রতি তার বক্তব্য—নারীরা ভোট দেবেন তাদের নিজস্ব মতাদর্শের ভিত্তিতে, আবেগে নয়।

ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরিফ উল্লাহ আদিব, শেখ সাদী হাসান, রাব্বি হোসেন, আরিফুজ্জামান উজ্জল, আব্দুর রশিদ জিতু, সোহানুর রহমান, আব্দুল মান্নান, মাহফুজুল ইসলাম মেঘসহ মোট ৯ জন। জিএস পদে রয়েছেন ৯ জন প্রার্থী, যাদের মধ্যে রয়েছেন আবু রায়হান কবির রাসেল, মাজহারুল ইসলাম, তানজিলা হোসাইন বৈশাখী, শাকিল আলী, জাহিদুল ইসলাম, আবু তৌহিদ মো. সিয়াম এবং শরন এহসান।

এজিএস (নারী) পদে ছয়জন এবং (পুরুষ) পদে দশজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া শিক্ষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, নাট্য, ক্রীড়া, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশ ও সমাজসেবা-সহ মোট ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী।

তবে নির্বাচন ঘিরে বিতর্কও কম নয়। সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে শেষ মুহূর্তে। নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় আদালতের নির্দেশে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। যদিও উচ্চ আদালতে রিট করে অমর্ত্য প্রার্থিতা ফিরে পেলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার আদালতে আপিল করে সেই আদেশ বাতিল করিয়ে নেয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা। তাদের দাবি ছিল, যদি ব্যালট এখনও ছাপানো না হয়ে থাকে, তাহলে অমর্ত্যের প্রার্থিতা পুনর্বহাল করতে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। অথচ প্রশাসন আদালতে গিয়ে বলেছে ব্যালট ছাপানো হয়ে গেছে। একই সময়ে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়া শিক্ষার্থীদের নাম কীভাবে ব্যালট থেকে বাদ দেওয়া হলো—এই প্রশ্নও ওঠে।

এই বিষয়ে উপাচার্য জানান, বিষয়টি আদালতের আদেশ অনুযায়ী হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে সব সময় সমাধান থাকে না। তবুও তিনি চান, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান হোক।

নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। ভোট গণনা হবে বিশেষ ওএমআর মেশিনে। দীর্ঘদিন পর এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে—এমন প্রত্যাশাই এখন জাবির শিক্ষার্থীদের মাঝে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.