মাগুরায় সম্প্রতি সংঘটিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় আগামী শনিবার ঘোষণা করা হবে। জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে যুক্তিতর্কের দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন। মামলার অভিযুক্ত চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গুরুত্বপূর্ণ এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। তিনি শুনানিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ডাক্তারি প্রমাণ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এবং এই রায় ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় ২৯ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেছে। এছাড়াও, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের শনাক্তকরণ ও তাদের বক্তব্য শোনা হয়েছে।
আদালতের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ এপ্রিল এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত একটানা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানির সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগে, শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে এবং বোনের শাশুড়িকে ২০১ ধারায় অপরাধের আলামত নষ্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে, ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গৃহীত হয়। ২৩ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
এর আগে, গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, ৬ মার্চ সকালে শিশুটিকে তার ছোট ছেলের কক্ষে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন।
শিশু মেয়েটি তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে, ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শিশুটির মা ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।