দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

১৬৬ কোটি টাকার সড়কে দুই বছরেই ফাটল

ফাটল দেখা দেওয়ায় তড়িঘড়ি বিল পরিশোধ

74

১৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর-চুকনগর ভায়া কেশবপুর ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ দুই বছর যেতে না যেতেই বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। সড়ক নির্মাণের কাজ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে ফাটল শুরু হলেও এক প্রকার তড়িঘড়ি করেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, মণিরামপুর ও কেশবপুরের বিভিন্ন স্থানে আবারও সড়ক সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রতিনিয়ত জোড়াতালি দেয়া হলেও যানজট লেগেই আছে। ঠিকাদার মোজাহার ও সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সড়কের কাজটি বাগিয়ে নেন।

এরপর সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে যেনতেনভাবে সড়কটি সংস্কার করে, বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ তারা লুটপাট করেছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোরের রাজারহাট থেকে কেশবপুর হয়ে চুকনগর বাজার পর্যন্ত ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২০০০ সালের জুলাই মাসে টেন্ডার আহবান করা হয়। কাজটি সন্ত্রাসী কায়দায় বাগিয়ে নেন তৎকালীন যশোর জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও তার ভাই রেন্টু
চাকলাদার, এবং শেখ পরিবারের ঘনিষ্ট মোজাহার ইন্টারন্যাশনালসহ চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

যার চুক্তি অনুযায়ী ১৭ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ৩ দফা মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করা হয়। ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের মধ্যে রাজারহাট থেকে বেগারীতলা বাজার পর্যন্ত বাবু পাটোয়ারী, বেগারীতলা থেকে চিনাটোলা বাজার পর্যন্ত রেন্টু চাকলাদার, চিনাটোলা বাজার থেকে কেশবপুর কলেজ গেট পর্যন্ত শাহীন চাকলাদার এবং কলেজ গেট থেকে চুকনগর বাজার পর্যন্ত মোজাহার ইন্টারন্যাশনাল সড়ক সংস্কারের কাজ করেন। কিন্তু সিডিউল অনুযায়ী তারা কাজটি না করে, আরসিসি ঢালাইতে ৩নং ইটের খোয়া, সাদা ডাস্ট পাথরসহ পিচের সাথে পোড়া মবিল এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। এভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কটি সংস্কার করার কারণে কাজ শেষ না হতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল দেখা দেয়।

সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং ঠিকাদাররা সড়ক সংস্কারে ব্যাপক দুর্নীতি করতে একনেকের পাশ করা নকশাটি তাদের মত করে কাটাছাট করে ৩৮ ফুট চওড়া সড়কটি ২২ ফুট করে নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া চুকনগর অংশে ওয়াচ টাওয়ার এবং গোলচত্বর নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
মণিরামপুর এলাকার ট্রাক চালক সাহাবাজ সরদার ও মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজারহাট-চুকনগর সড়কটি খানাখন্দের কারণে বর্তমানে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এতে যেমন যানজট লেগেই আছে, তেমনি মহাজনরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে সময়, তেমনি ভোগান্তি বেড়েছে।

যশোর সড়ক ও জনপথের তৎকালীন কেশবপুর ও মণিরামপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী এম এ হাসান বলেন, ‘সড়ক নির্মাণকালে ভেঙ্গে গেলে তিনি অন্তত একবার সংশ্লিষ্ট ঠিকারদারদের দিয়ে তা মেরামত করিয়ে নেন।’
সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘রাজারহাট থেকে চুকনগর পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের পর যেসব এলাকায় আরসিসি ঢালাই দেয়া হয়েছে, সেসব এলাকা ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বলে শুনেছি। সড়ক নির্মাণের পর তার মেয়াদকাল তিন বছর থাকে। এরমধ্যে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঠিকাদারের ওপর দায় বর্তায়। আমি ওই সময় যশোরে ছিলাম না। তাই খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিঠি দেওয়া হবে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.