বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সৎ নেতৃত্ব ও ইসলামী অনুশাসন ছাড়া মানবতার প্রকৃত মুক্তি সম্ভব নয়। কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে যদি রাষ্ট্র গঠন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পাবে। সব দলের শাসন আপনারা দেখেছেন বাকি আছে শুধু ইসলামপন্থাীদের শাসন দেখার। তাই আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থাী দের জোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
৩০০ আসনের পার্লামেন্টে বেশিরভাগ আসনে যদি আমরা সৎ লোক পাঠাতে পারি তাহলে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। বিবেক দিয়ে মানুষ ভালো মন্দ বোঝে হালাল-হারাম বোঝে তাই এই বিবেক দিয়ে ভোটের ব্যাপারে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামীর নির্বাচনে আবার কেউ কেউ অগাধ অর্থ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবে, থাকবে পেশি শক্তিও। তাই আসুন মানুষের কল্যাণের জন্য বিবেককে কাজে লাগিয়ে অর্থ ও পেশি শক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভেদাভেদ ভুলে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সৎ লোককে আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত করে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ি।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী ফুলতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগকালে সন্ধ্যায় ফুলতলা আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা চত্বরে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
এছাড়াও তিনি সকাল ৭টায় ফুলতলা ইউনিয়নের শিকিরহাট হাফ রাস্তায়, সকাল ৯টায় দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স এলাকায়, বেলা ১১টায় ভাটপাড়া খেয়াখাট এলাকায়, দুপুর ১২টায় ভদ্র পুকুর এলাকায়, বিকাল ৪টায় বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকায় এবং বিকাল সাড়ে বুড়িয়াযডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারী অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্য মাষ্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা আল মুজাহিদ। সেক্রেটারী মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আজিজুল হক, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি শেখ মোঃ আলাউদ্দিন, পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাষ্টার মফিজুল ইসলাম, সেক্রেটারি হাফেজ আলামিন গাজী, জামিরা ইউনিয়ন আমীর মোঃ শরিফুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম, শেখ আঃ জলিল, এএইচএম শফিউল্লাহ হাজেরী, মোঃ শাহজাহান মোল্যা, ফুলতলার অমুসলিম শাখার সভাপতি গৌরহরি দাস, মাওলানা জোবায়ের হোসেন ফাহাদ, গাজী নূর ইসলাম বাবুল, নূর আলী আকুঞ্জী, সোহেল সরদার, জুলহাস আহমেদ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, ফারুক সরদার, কাজী সাজ্জাদ হোসেন, মোঃ ফয়সাল শেখ প্রমুখ।
পরওয়ার আরও বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার সাড়ে ৩ থেকে ৪কোটি নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোট একটি পবিত্র আমানত। আপনার ভোটে কেউ নির্বাচিত হয়ে যদি অন্যায় অত্যাচার অপকর্ম করে তাহলে তার জবাবদিহিতা আল্লাহর কাছে দিতে হবে। তাই ভোট দিতে হবে সৎ যোগ্য লোক দেখে যারা আপনার আমানতের খেয়ানত করবে না, অন্যায় অপকর্ম করবে না, সুখী সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার জন্য তারা জনগণের সেবক হবে। আমাদের আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডাক্তার শফিকুর রহমান ইতিমধ্যে বলেছেন জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের খেদমত করার সুযোগ আসে তাহলে আমরা জনগণের শাসক নয় সেবক হবো। তাই আমাদের প্রতীক দাড়িপাল্লা হলো ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক। এজন্য সর্বত্র শ্লোগান উঠুক তরুণ প্রজন্মের প্রথম ভোট দাড়িপাল্লার পক্ষে হোক।
বিগত ১৬ বছরের শাসন আমল কে কালো যুগ আখ্যা দিয়ে সাবেক এমপি আরো বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হত্যা, খুন, গুম, লুটপাট, দূর্নীতি, দুঃশাসনে দেশকে মূলত অকার্যকর করে ফেলেছিল। বিএনপি জামায়াতের হাজার হাজার নেতা কর্মীদের জুলুম, নির্যাতন, মামলা, হামলা করে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছিল। ২৪ শের জুলাই আগস্ট এর ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কালো যুগের অবসান ঘটেছে। সামনে আর কোন কালো যুগ যাতে না আসে সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। ২ হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত আর ২০ হাজার ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ব বরণ যাতে বৃথা না যায় সে ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি থাকাকালীন সময়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ সম্পর্কে সাবেক এমপি আরও বলেন, আমি এমপি থাকাকালীন সময়ে আপনাদের দুটি ওয়াদা দিয়েছিলাম। এক. ফুলতলা ডুমুরিয়ার সন্ত্রাস কবলিত জনপদ কে সন্ত্রাসমুক্ত করা আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। দুই. ফুলতলা ডুমুরিয়ার উন্নয়ন. আমার সময় আমি রাস্তা, ঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির শ্মশান, গোর¯’ান সবজায়গায়তেই যতটুকু পেরেছি উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আর এই উন্নয়নের সময় আমি হলফ করে বলতে পারি হারাম একটি টাকাও আমার হলকুম দিয়ে ভিতরে ঢুকেনি। আগামী আট দশ মাস পরে আমরা আশা করছি বর্তমান সরকার একটি স্ব”ছ ও নিরপক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আপনারা যদি আমাকে আবারও দায়িত্ব দেন তাহলে সে দায়িত্ব নিতে আমি প্র¯‘ত। আমি দল মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে লুটপাট, খুনখারাবি, অপকর্ম, দুর্নীতি, শিক্ষা, চাকুরী সব কিছু একদলের হাতে ছিল। তারা ক্ষমতাকে যথাই”ছা ব্যবহারের কারনেই মূলতঃ ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেছিল। পাঁচ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা নতুন বাংলাদেশে আবার নতুন করে ফ্যাসিবাদের ধ্বনি শোনা যা”েছ। তারা হাট, ঘাট, টেম্পু স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড, সব জায়গায় দখলদারিতে ব্যস্ত। আসলে তারা আর এরা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। তাই আর যাতে কোন ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এজন্য আগামী নির্বাচনে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে এদেশে ছাত্র-জনতার আশা আকাক্সক্ষা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
গণসংযোগকালে তিনি জামায়াতের শিকিরহাট খেয়াঘাট ইউনিট কার্যালয় উদ্বোধন, ফুলতলা রি-ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ, রহমানিয়া এলিমেন্টরী স্কুল, যুগ্নিপাশা দাখিল মাদ্রাসা, পায়গ্রামকসবা আবু মোর্কারম ফজলুল বারী দাখিল মাদ্রাসা, ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ এবং রাড়ীপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।