ইউক্রেন সীমান্তে রুশ ট্যাংকের গর্জন যেন নতুন সংকেত দিচ্ছে—শান্তির বদলে এবার পুতিনের নজর ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’-এর দিকে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়ে দিলেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চল সুরক্ষায় জোন গড়ে তুলছে রুশ সেনাবাহিনী।
রাজধানী মস্কো থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে পুতিন বলেন, “আমি আগেই বলেছি, সীমান্তে বাফার জোন তৈরি দরকার। এখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। শত্রুর গোলাবর্ষণের অবস্থানগুলো দমন করা হচ্ছে।”
এই ঘোষণার মধ্যেই আজ (শুক্রবার) রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এক হাজার বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে। অথচ তার আগের দিন এমন ঘোষণা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট, যা ইউক্রেনকে আরও চাপে ফেলতে পারে।
পুতিন জানালেন, সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে মানুষকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পুনর্গঠন, অবকাঠামো মেরামত এবং যোগাযোগব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের ওপরও জোর দেন তিনি।
পুতিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিওরহি তিখি কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তার ভাষায়, “এটি একতরফা আগ্রাসন। শান্তির পথে প্রধান বাধা এখন রাশিয়া।”
পুতিনের এই বক্তব্যের আগেই একটি বড়সড় হামলায় ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের লগভ শহরে দুই শিশুসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়। চারটি গাড়ি, দুটি বাড়ি এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেও জানান কুরস্ক অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর।
এদিকে মার্কিনভিত্তিক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার জানিয়েছে, পুতিন সম্প্রতি কুরস্ক সফরে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বাফার জোন তৈরির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এক কর্মকর্তা ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে জোন তৈরি করার আহ্বান জানালে পুতিন জিজ্ঞেস করেন, “জোনটি কত কিলোমিটার গভীর হওয়া উচিত?”
রুশ সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তি জানিয়েছে, পুতিন এ-ও বলেন যে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ সীমান্তে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে, এবং সেটাই এই বাফার জোনের পেছনের বড় কারণ।
তবে শুধু সামরিক কৌশল নয়, কূটনীতির ময়দানেও চলছে পাল্টাপাল্টি চাল। তুরস্কে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে এক হাজার বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্স-এ দেওয়া বার্তায় জানিয়েছেন, রাশিয়ার দেওয়া তালিকার যাচাই চলছে এবং বন্দিমুক্তির চুক্তি বাস্তবায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেনের প্রস্তাবিত তালিকা পেয়েছে মস্কো। এখন দেখার, বন্দি বিনিময়ের আলোচনায় নতুন আশার আলো জ্বলে কিনা—না কি সীমান্তে তৈরি হতে থাকা বাফার জোনই আগাম যুদ্ধের ভূমিকা হয়ে দাঁড়ায়।