সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: টানা বর্ষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট তীব্র জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি অফিস, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ এবং কৃষকেরা।
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কলারোয়া পৌরসদরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে থইথই করছে। কলারোয়া সরকারি হাসপাতাল চত্বর, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, কলারোয়া আলিয়া মাদরাসা, বেত্রবতী হাইস্কুলসহ একাধিক শিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় পানি জমে গেছে। এতে সেবা নিতে আসা মানুষ ও কর্মরতদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
এই জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা ও সাংবাদিক দেবাশীষ চক্রবর্তী বাবু বলেন, “আমার পানের বরজ এবং প্রায় ৪ বিঘা ফসলি ক্ষেত পুরোপুরি পানির নিচে। বাড়ির উঠানেও পানি উঠে গেছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম এনামুল হক ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, “সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নতুন করে সবজি চাষ করা সম্ভব নাও হতে পারে, যা কৃষকদের জন্য বড় দুঃসংবাদ।”
এদিকে, বৃষ্টির কারণে কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর ও ভ্যানচালকের মতো খেটে খাওয়া মানুষ। ভ্যানচালক ভোলা জানান, “বৃষ্টির জন্য ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছি না, ভাড়াও নেই। প্রতিদিনের চাল-ডাল কেনা বন্ধ। এনজিওর কিস্তি কীভাবে দেবো, সেই চিন্তায় আছি।”
একইভাবে দিনমজুর আখতারুল ইসলাম বলেন, “দুইদিন ধরে ঘরে বসে আছি। কোনো কাজ নেই। বৃষ্টি থামারও লক্ষণ দেখছি না। পরিবার নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে গেছি।”
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।