ভবদহ অভিমুখী তিন উপদেষ্টা একসঙ্গে আগমনে ভুক্তভোগী প্রান্তিক চাষীদের আশ্বস্ত করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।তিনি বলেছেন ভবদহের জলাবদ্ধতা একটি স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করছে। তবে সবার প্রচেষ্টায় এ বছর ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভবদহ স্লুইসগেট পরিদর্শন শেষে ভবদহ মহাবিদ্যালয় কলেজ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত ২০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়েছে। অতীতে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা সঠিক সদিচ্ছা দেখাননি। সরকার জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে। আমডাঙ্গা খাল, হরিভদ্রা ও আপার ভদ্রা খননের কাজ সেনাবাহিনী করবে।তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবাই সজাগ আছি, যাতে এই অঞ্চলের মানুষকে আর দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। কৃষকদের বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এই এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণ আদায় বন্ধ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে কিছু স্থানীয় সমস্যাও রয়েছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’হরি নদীর চারপাশে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ইটভাটাগুলো সরকারের নয়। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। একটি কমিটি কাজ করছে। বর্তমান সরকারের সময়েই ভবদহের স্থায়ী সমাধানের কাজ শুরু হবে।মতবিনিময়সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রনওক জাহান, ভবদহ আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল কবীর জাহিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় শেষে উপদেষ্টারা কৃষি জমি পরিদর্শন ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই পরিদর্শক দলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।এদিকে উপদেষ্টাদের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শনের ঠিক আগমুহূর্তে, ভবদহে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) চালু করা নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। টিআরএম চালুর পক্ষে এবং বিপক্ষে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে নিজ নিজ দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।জানা যায়, টিআরএম চালুর দাবিতে একটি পক্ষ দ্রুত এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে, টিআরএমের বিপক্ষে থাকা বিক্ষোভকারীরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাদের দাবি, টিআরএম চালু হলে এই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য খাত মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে তারা নদী খননের ওপর জোর দিচ্ছেন।টিআরএম বিরোধী আন্দোলন থাকা আসাদুজ্জামান বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছেন, তাদের অধিকাংশই এই এলাকার ভুক্তভোগী নন। এই অঞ্চলে তাদের এক কাঠা জমিও নেই। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা এই অযৌক্তিক দাবি করছেন।
তবে অন্যপক্ষ বলছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন তারাই ভবদহের জলাবদ্ধতা দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় জীবনযাত্রার মান এবং কৃষিকাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে আসছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন উপদেষ্টার এই পরিদর্শন স্থানীয় জনগণের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীতে পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়ে গেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষার জলাবদ্ধতা খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয়। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও মাছের ঘের। তখন এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে, স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। স্থায়ী দুর্ভোগ থেকে লাঘব পেতে দখলদারের হাত থেকে নদী আগের জায়গায় আনতে হবে । নদী খনন দখলমুক্ত প্রসস্ত ভেড়ীবাধ ভবদহ এলাকা যাতে পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত হয় এদিকে নজর দেওয়ার জন্য প্রান্তিক চাষিরা এলাকার লোক জোর দাবি জানাই।