তাজের বয়স ১১ মাস। বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। সঙ্গে আছে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টও। চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুটির ব্যবহার করতে হচ্ছে নেবুলাইজার। তাজের মা তাজমিন বলেন, কয়েকদিন ধরে জ্বর, ডায়রিয়ায় ছেলেটা বেশ কষ্ট পাচ্ছে। শুধু আমার সন্তান নয়, আমাদের আশপাশের বাসার অনেক বাচ্চাই এখন ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত।
কয়েকদিন ধরে খুলনাসহ সারা দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের শুরু থেকেই সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এ সময় ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়।
জানা গেছে, খুলনার অধিকাংশ হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। আর এসব সর্দি-জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। এ ছাড়া ওইসব হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বর, ঠান্ডা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
খুলনা শিশু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছে সাত মাস বয়সী শিশু তাবাসসুম। গত ২৯ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয় তাকে। চলছে তার চিকিৎসা। সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। অন্য ওষুধের সাথে প্রতিদিন তিনবার নেবুলাইজার করার ফলে অবস্থা আগের থেকে কিছুটা উন্নত।
খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাযায়, গতকাল খুলনা সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮, মংলায় ১৩, যশোরে ১১, কয়রায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সাথে আগামী কয়েকদিন একই ধরণের শীতের দাপট থাকতে পারে। বাড়তে পারে কুয়াশার প্রভাব।
এ হাসপাতালটিতে ২৭৫ টি সিট রয়েছে। গেল কয়েকদিন ধরে সব সিটেই রোগী রয়েছে। অন্যদিকে গেল ডিসেম্বরে এ হাসাপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ৮২ জন। আর বহিঃবিভাগ থেকে সেবা নিয়েছে ১৩ হাজার ৪শ’ ৮২ জন শিশু রোগী। আর শুক্রবার এ হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ৪৭জন। একই দিন বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ১৮৩ জন। সংশ্লিষ্ঠরা বলছে, শুক্রবার সাধারনত অল্প রোগি হয়। কিন্তু ৩ জানুয়ারি শুক্রবার অনেক বেশি রোগি হয়েছে। গতকাল শনিবার বহির্বিভাগে ৫৪৪ জন শিশু রোগী আসে। যার মধ্যে ভর্তি হয় ২৯ জন। এছাড়া গত সাতদিনে ২ হাজার ৯ শত ৪৮ জন রোগী আসে বহির্ভিবাগে। যার মধ্যে ভর্তি হন ৩১৫ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে গেছে। আক্রান্ত অনেক শিশুকে দেরিতে তাদের কাছে আনা হচ্ছে। আগেই অভিভাবকরা স্থানীয় ফার্মেসির ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে শারীরিক জটিলতা বাড়ছে।এছাড়া বর্তমানে শীতের সঙ্গে বায়ুদূষণও যোগ হয়েছে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্রংকিউলাইটিস এবং দুই বছরের বেশি বয়সি শিশুদের নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। যাদের অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে এই সময়টাতে যেন শিশুরা পর্যাপ্ত পানি পান করে। বড়দের যদি জ্বর, সর্দি, কাশি হয়, তাহলে তারা যেন বাসায় মাস্ক ব্যবহার করেন। কারণ, তারা যখন হাঁচি, কাশি দেবেন তা দ্বারা শিশুরা যেন সংক্রমিত না হয়।
খুলনা শিশু হাসপাতালের সাবেক তত্বাবধায়ক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: মোঃ কামরুজ্জামান জানান, এই সময়টাতে খুব সতর্ক থাকতে হয় শিশুদের নিয়ে। শিশুকে বার বার বুকের দুধ খাওয়াবে হবে। ৬ মাসের বেশি বয়সের শিশুদেরকে ফল, মধু পানি, ফলের রস খাওয়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ঠা-া না লাগে। অন্যদিকে ঘেমে না যায়। সকালে রোদে রাখতে হবে। তবে যেন বাতাস না লাগে। মোট কথা হলো এইসময়টাতে শিশুদের প্রতি একটু বেশি কেয়ার নিতে হবে।
খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্টার ডাঃ শরীফ আশরাফুল হাবিব (সাজীদ) বলেন, সাধারণত শীতের সময় শিশুদের কয়েকটি রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। তার ভিতর অন্যতম শিশু ডায়রিয়া। সাধারণত ছোট্ট শিশুরা অর্থাৎ দুই বছরের নিচের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। তবে এর উপরের বয়সের শিশুরও হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা যায়, শীতে শিশুদের সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে অল্পতেই শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া বেশি হয়। যেমন: রোটা ভাইরাস, এডেনো ভাইরাস। তাছাড়া কিছু ব্যাকটেরিয়া দিয়েও শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে।