ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো পৌঁষের কাকডাকা ভোর। উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা কাঁপুনি ধরাচ্ছে অস্থিমজ্জায়। নগরে তখনও দিনের আলো ফোটেনি। এর মাঝে কয়েকটি সড়কে বসে মানুষ বিক্রির হাট। এ হাটে অর্থের বিনিময়ে মানুষের শ্রম বিক্রি হয়। কিন্তু তীব্র শীতের কারণে কোন কাজ নেই। সকাল থেকে প্রায় দুপুর অবদি বসে কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন শ্রমজীবি মানুষগুলো।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) ভোরে খুুলনা নগরের শিববাড়ী চত্বর, ময়লাপোতা মোড় ও সাত রাস্তার মোড়ে সরেজমিনে এই অবস্থা দেখা যায়। তীব্র শীত থেকে বাঁচতে মানুষগুলো মলিন সোয়েটার, ছোড়াতালি দেওয়া লুঙ্গি, পুরোনো প্যান্ট, মাথায় টুপি, পায়ে মোজা পড়ে বসে আছে।
দিনমজুর মানুষগুলো জানান, নির্মাণকাজ ও গৃহস্থালির কাজে জনপ্রতি প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকা হিসেবে তাদের নিয়ে যায় মহাজনরা। খুলনা নগরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষরা শ্রম বিক্রি করতে এ হাটে আসেন। তবে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর থেকে কাজের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দিনমজুর শ্রেণীর মানুষদের দুঃখের শেষ নেই। অর্ধাহারে অনাহারে দিন পার করছে নি¤œআয়ের মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
ময়লাপোতা মোড়ে কোদাল, ঝাড়ু ও ব্যাগ হাতে বসে থাকা বয়স্ক রাজমিস্ত্রী মোবারেক মোড়ল বলেন, ফজরের পর থেকেই আমরা শ্রমিকরা এখানে দাঁড়িয়ে থাকি। যাগে বাড়ি কাম কাজ চলে, তারা এখান থিকি লোক নিয়ে যায়। কিন্তু এই শীতে কাজকাম কমে গেছে। নারী শ্রমিক রিজিয়া পারভীন বলেন, পুরুষদের তুলনায় এমনিতে আমাদের কাজকাম কম। শীতে আরও কাজ কমে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, তত দেনায় পইরে যাচ্ছি।
শিববাড়ি মোড়ে দিনমজুর খোকন সরদার বলেন, গত দুইদিন কাজ পাইনি। ভোর ৬টায় এসে বাড়ি গিসি ১০টায়। আজগেও কাজ না পালি, ধার কইরে বাজার করতি হবে। আমরা গরীবরা না খাইয়ে মইরে যাচ্ছি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, খুলনা বিভাগে ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। আকাশ মেঘলা থাকায় তাপমাত্রা একটু বাড়লেও শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। আরও দুই-তিন ঘন কুয়াশা পড়বে। সেই সাথে শীতের প্রকোপও বাড়বে।
খুলনা ফুড ব্যাংকের পরিচালক শাফায়েত সরদার বলেন, অনেক উন্নত দেশে কর্মহীন মানুষদের ভর্তুকি দেয়া হয়। আমাদের দেশে এ সুযোগ নেই। আমরা আশা করবো সরকার নি¤œআয়ের কর্মহীন মানুষের জন্য ব্যবস্থা করবেন।