গাজার আল-বাসমা ফার্টিলিটি সেন্টার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় শত শত ফিলিস্তিনি নারী সন্তান জন্মদানের শেষ সম্ভাবনাও হারিয়ে ফেলেছেন। প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংসের এই ঘটনা যেন গাজার নারীদের জীবনের গভীরতম বেদনার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
২৬ বছর বয়সী নুরা জুলাই ২০২৩-এ গর্ভবতী হন। বহু বছর ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) চিকিৎসার পর তার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছিল। সেই সময় তিনি এবং তার স্বামী মোহাম্মদ ভবিষ্যতের জন্য আরও দুটি ভ্রূণ সংরক্ষণ করেছিলেন গাজা সিটির আল-বাসমা ফার্টিলিটি সেন্টারে।
কিন্তু ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরু হলে, সেই স্বপ্ন এক মুহূর্তেই ধুলিসাৎ হয়ে যায়। নুরা বলেন, “আমার কিছুই আর বাকি নেই। আমার স্নায়ু ভেঙে পড়েছে।”
গর্ভধারণের সাত মাস পরে নুরা মারাত্মক রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে, তাকে এক বর্জ্যবাহী গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এক যমজ শিশুর মৃত জন্ম হয়, অপরটি জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়।
এছাড়া, ক্লিনিকটিতে সংরক্ষিত ছিল প্রায় ৪,০০০ হিমায়িত ভ্রূণ ও ১,০০০ এর বেশি শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। ক্লিনিকটির পরিচালক ডা. বাহা গালাইনি জানান, ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বোমাবর্ষণে কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরিস্কার তারিখ না জানা গেলেও, তখন থেকেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
নাইট্রোজেন সংকটে ভ্রূণগুলোর সুরক্ষা ব্যাহত হয়। যুদ্ধের তীব্রতায় নতুন নাইট্রোজেন সরবরাহ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে বহু নারী তাদের একমাত্র মাতৃত্বের সুযোগ হারান। অনেকে বার্ধক্য, ক্যান্সার ও জটিল রোগে আক্রান্ত থাকায় নতুন করে চিকিৎসা শুরু করার ক্ষমতা রাখেন না।
জাতিসংঘের এক তদন্তে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গাজায় ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলো ধ্বংস করেছে, যা গাজার জনগণের প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস করার একটি গণহত্যামূলক কাজ।” তবে ইসরাইল এ অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” ও “প্রপাগান্ডা” হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করে।
গাজার ৯টি প্রজনন ক্লিনিকই এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত বা অকার্যকর। নুরা, ইসলাম লুব্বাদ ও সারা খুদারি’র মতো অনেক নারী আজ সন্তান ধারণের স্বপ্ন থেকেও বঞ্চিত। তাদের চোখে এখন শুধুই হতাশা। ভ্রুণ হারিয়ে তাদের মা হওয়ার স্বপ্ন যেন গাজার ধুলোতেই মিশে গেছে।