দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

রূপসা নদীতে নৌকা বাইচ: লাখো মানুষের ভিড়

40

খুলনা: রূপসা নদীর তীরে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ, যা এই অঞ্চলের একটি বিশেষ সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রূপসার দুপাড়ে লাখো মানুষের ভিড় জমেছিল, যখন নৌকা বাইচের আনন্দে মেতে উঠেছিল হাজারো দর্শক। বিশেষ এই প্রতিযোগিতাটি প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে অংশগ্রহণ করেছিল খুলনা, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া এবং কাশিয়ানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ১০টি দল।

প্রতিযোগিতার সূচনা হয়েছিল সকাল ১১ টায় একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালির মাধ্যমে। র‍্যালিটি খুলনার হাদিস পার্ক থেকে শুরু হয়ে ১নং কাস্টমস ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। র‍্যালিতে বাংলাদেশ পুলিশের বাদক দল, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদক দল, এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেন। এই আনন্দমুখর র‍্যালিটি পুরো শহরের মধ্যে এক নতুন উচ্ছ্বাস তৈরি করে, এবং দর্শকদের মনে উৎসাহের ঝড় তোলে।

নৌকা বাইচের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে আগত কিছু জনপ্রিয় দল। খুলনার কয়রার ‘সুন্দরবন টাইগার’, মাগুরার ‘আল্লাহর দান টাইগার’, গোপালগঞ্জের ‘তুফান এক্সপ্রেস’ এবং ‘স্বপ্নের তরী’, টুঙ্গিপাড়ার ‘মোবাইল’ ও ‘জয় মা কালী’, কাশিয়ানীর ‘মায়ের দোয়া এক্সপ্রেস’, খুলনা তেরখাদার ‘ভাই ভাই জলপরি’ সহ মোট ১০টি দল তাদের নিজস্ব নৌকা নিয়ে অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি নৌকা দলে ছিল পেশাদার মাঝি-মাল্লা এবং তাদের বৈঠার ছন্দে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। নৌকা বাইচের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল উত্তেজনায় পূর্ণ এবং নৌকার গতি ও দক্ষতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সুরের মাধ্যমে দর্শকরা উপভোগ করেছেন প্রতিটি পাল।

এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুধু একটি শখ বা খেলা নয়, এটি রূপসা নদীর দুপাড়ের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচের মাধ্যমে বারবার নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অংশগ্রহণকারী দলগুলো কেবলমাত্র গতি ও কৌশলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, বরং এতে তারা নিজেদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি প্রতিফলিত করে।

প্রতিযোগিতার শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে পুরস্কৃত করা হয় ৭৫,০০০ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দল পায় ৫০,০০০ টাকা এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পায় ৩০,০০০ টাকা।  নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে কয়রার সুন্দরবন টাইগার্স নামক নৌকা বাইচ দল, দ্বিতীয় জয় মা কালী ও তৃতীয় হয় মোবাইল নামের নৌকা বাইচের দল।

এই পুরস্কারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাটি আরও উত্তেজনাপূর্ণ এবং উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে ওঠে, যেখানে প্রতিটি দল তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে চায়।

এছাড়া, খুলনা জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতার আয়োজনকে বিশেষভাবে সুরক্ষা ও সহায়তা দিয়েছেন। তাদের উপস্থিতি এবং উৎসাহ প্রদান করেছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি উৎসাহী পরিবেশ। নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের উল্লাস এবং আনন্দের সৃষ্টি হয়, যা একে এক দৃষ্টিনন্দন উৎসবে পরিণত করে।

রূপসা নদীর এই ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুধু একটি খেলাই নয়, বরং এটি দক্ষিণ বাংলার মানুষের এক অসাম্প্রদায়িক, ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। প্রতিটি বছরই এই প্রতিযোগিতাটি মানুষের জীবনে নতুন আশা, আনন্দ এবং একাত্মতার বার্তা পৌঁছে দেয়।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকারের সভাপতিত্বে নৌকা বাইচ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সুরাইয়া আক্তার জাহান, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার ও খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.