দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

মৌলভীবাজার কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ‘ছনের ঘর’

14

গ্রামে প্রবাদ রয়েছে- ছনের ঘর নয়, এটা গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। মৌলভীবাজারের চা বাগানে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ছনের ঘর। কয়েক দশক আগেও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ছনের ছাউনির মাটির ঘর দেখা যেতো। কিছু কিছু চা বাগানগুলোতে এখন ছনের ঘর খুব কমই দেখা যায়। এ ঘর শীত ও গরম মৌসুম আরামদায়ক তাই আরামের জন্য চা বাগানের ও গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান ও ছন ঘর তৈরি করে থাকতেন।
ছনের ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান ও টিন। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনমানে আসছে পরিবর্তন। চা বাগানের মালিকপক্ষ শ্রমিক দিয়ে ছন কেটে শুকিয়ে বাগানে ছনের ঘর তৈরি করে দিতেন। চলতো ছনের ঘর বানানোর আমেজ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে এখনও বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই দু একটা ছনের ঘর টিকিয়ে রেখেছেন।
সরেজমিনে কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে এখনো কিছু মাটির ঘর দেখা যায়। তবে সেগুলোও বেশি দিন থাকবে না। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বাগানগুলোতেও। কম-বেশি সব বাগানগুলোতে দালানকোঠা তৈরী হইতেছে। ছনের ঘরগুলো বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দূযোর্গে বিশেষ ক্ষতি সাধন হয় বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘর-বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে। হয়ত সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন ছনের ঘরের কথা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে,আগামী প্রজন্মের কাছে মাটির ঘর রূপকথার গল্পের মত মনে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ছনের ঘর গল্প, কবিতার ছন্দে বা সাহিত্যর পাতায় বা যাদুঘরে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর প্রেমনগর চা বাগানের বিভিন্ন টিলায় এখানো ছনের ঘর রয়েছে। চা শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে আরামদায়ক ভাবেই বসবাস করছেন। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকায় আধুনিকতার ছোঁয়াও লাগেনি তাদের মাঝে। চা বাগানের মালিকপক্ষ শ্রমিক দিয়ে ছন কেটে শুকিয়ে বাগানে ছনের ঘর তৈরি করে দিতেন। তাদের দৈনিক মজুরি ছিল ৩শ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে দুই থেকে চার হাত এবং পাঁচ থেকে আট হাত লম্বা এক ভার ছনের দাম ৫০০-৭০০ টাকা।
প্রেমনগর চা বাগানের শ্রমিক মুন্না গোয়ালা জানান, আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর আগেও চা বাগান ও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছনের ঘর ছিল। ছনের ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের বিবর্তনে অধিকাংশ মানুষ ছনের ঘর ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় অনেক লোকের বসবাসের জন্য ইটের ঘরকে প্রথম পছন্দের তালিকায় নিয়ে আসছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌলভীবাজারের চা বাগানের ভেতর ঐতিহ্যের নিদর্শন ছিল ছনের ঘর। গ্রামীণ এলাকার গরিব-মধ্যবিত্তের বাড়ির ঘরের ছাউনির একমাত্র অবলম্বন ছিল এই ছন। সেই সময় ছন মাটি কিংবা বেড়ার ঘরে ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর এখন মানুষ পাকা-আধাপাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত।
চা বাগানের শ্রমিক রাজেস কৈরী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা ছনের ঘর বসবাস করছি। আমাদের তেমন টাকা পয়সা নাই পাকা ঘরে থাকবো যে। আরামের জন্য ছনের ঘর ই ভাল্।
কমলগঞ্জ ১নং রহিমপুর ইউনিয়ন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিতাংশু কর্মকার।বলেন, কালের বিবর্তনে আজ ছনের ঘরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় তাদের বাড়িতে ছনের ঘর ছিল। যে ঘরে তারা বসে সাচ্ছন্দবোধ করত। সন্ধ্যা হলেই বোঝা যেত ঘরগুলো যেন এক শান্তির চাদর। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্যের ছনের ঘর রূপকথার গল্প কথনের মতো এক সময় হয়ে যাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.