দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ১০ বিদ্রোহীর মৃত্যুকে ঘিরে চরম উত্তেজনা

9

মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের তামু জেলায় সম্প্রতি এক গণচিতার দৃশ্য যেন গোটা অঞ্চলকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। রক্তমাখা সামরিক পোশাক পরা কিশোর ও তরুণদের মরদেহ, যেগুলো কালচে হয়ে ফুলে উঠেছে, সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ত্রিপলের ওপর। দাহের জন্য প্রস্তুত ওই দেহগুলো ১৪ মে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) অন্তর্ভুক্ত পা কা ফায়ের (পিকেপি) ১০ সদস্যের। নিহতদের মধ্যে তিনজন কিশোরও রয়েছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের চান্দেল জেলায় সীমান্তরক্ষায় নিযুক্ত আধা সামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলস দাবি করেছে, মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা এলাকায় অস্ত্র বহনকারী ১০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি গোপন সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন। তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

তবে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) এই দাবিকে নাকচ করে বলেছে, নিহতরা কোনো গুলিবিনিময়ে মারা যাননি বরং তাঁদের আটক করে নির্যাতন শেষে বিচার ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে তাঁরা দাবি করেছে, নতুন ক্যাম্প স্থাপনের খবর ভারতীয় বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘নন-ইন্টারফেয়ারেন্স’ বা ‘এক-অপরের বিষয়ে নাক না গলানোর’ এক প্রকার বোঝাপড়া ছিল। তবে ১৪ মের ঘটনাকে তারা এই বোঝাপড়ার অবসান হিসেবে দেখছেন।

এই ঘটনার পর থেকেই তামুতে থাকা বিদ্রোহী যোদ্ধা এবং শরণার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। পা আ ফা সদস্য থিডা বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে নিরাপদ বোধ করতাম। কিন্তু এখন আতঙ্কে দিন কাটছে।”

তিনি আরও জানান, “এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। আর প্রথমবার হলে, দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বারও যে হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?”

ঘটনার কয়েক দিন পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সন্দেহভাজনরা আগে ভারতীয় বাহিনীর ওপর গুলি চালায় এবং পাল্টা জবাবে তারা নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় সাতটি একে-৪৭ রাইফেল এবং একটি রকেটচালিত গ্রেনেড লঞ্চার।

তবে, ভারতের এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এই বিবৃতিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আল–জাজিরাকে তিনি জানান, এই অভিযান ছিল আগাম পদক্ষেপ, না কি প্রতিক্রিয়া—তা এখনো অস্পষ্ট। তাঁর মতে, এটি হয় কোনো নিয়ম বহির্ভূত অভিযান অথবা উসকানির প্রতিক্রিয়া—দুটোর কোনোটিই পুরোপুরি খাপ খায় না।

নতুন করে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং এই সহিংস ঘটনা নিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রাজ্যগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বহু প্রজন্ম ধরে যারা দুই দেশের সীমান্ত এপার-ওপার যাতায়াত করে এসেছে, তারাও এই অবরোধ এবং সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন।

বিশ্লেষক অংশুমান চৌধুরীর মতে, “এই হত্যাকাণ্ড ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বহুদিন ধরে চলে আসা অলিখিত রীতিনীতিতে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এ ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সামান্য অসতর্কতাই পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলতে পারে।”

এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা নতুন করে চরমে উঠেছে। যে নীরব বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে গত কয়েক বছর চলছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত রাজনীতি, তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.