দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

ভাঙন কব‌লিত কয়রার গোবিন্দপুর

দশহা‌লিয়ায় নেই কোন আশ্রয় কেন্দ্র

18

সাইফুল ইসলাম,কয়রা : খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, আটরা, দশহালিয়া ও লোকা এলাকাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস—এই তিন প্রকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা এখানে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। অথচ এই এলাকায় নেই কোনো কার্যকর আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে দুর্যোগে মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে।

স‌রেজ‌মিন সেখা‌নে যে‌য়ে দেখা যায়,
নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা জনপদে গোবিন্দপুর গাজী আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজ না‌মে এক‌টিমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। দু‌র্যো‌গের সময় সেখা‌নে মানুষ আশ্রয় নেয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটির ভব‌ণের অবস্থা জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত। দোতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। তবু এলাকার শিশু-কিশোররা ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ক্লাস করছে কিংবা দরজা-জানালাবিহীন কক্ষগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান, সিত্রাং, রি‌মে‌লের সময় ঝুঁ‌কি নি‌য়ে ওই ভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল শত শত মানুষ।

গাজী আব্দুল জব্বার স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক রবিউল ইসলাম বলেন, এ এলাকায় কোন আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় মানুষ গাছে উঠেও আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। এ এলাকার তিন কি‌লো‌মিটা‌রের ম‌ধ্যে কোন সাইক্লোণ নেই।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মাওলানা মহিববুল্যাহ জানান, “আমাদের গ্রামটা প্রতিদিন নদী খেয়ে ফেলছে। গত ৫ বছরে ৭০টার বেশি পরিবার ভিটেমাটি হারাইছে। ঝড় হ‌লে কিংবা বাঁধ ভে‌ঙে প্লা‌বিত হ‌লে আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই।
আমরা কোথায় যামু?”
এই প্রশ্নটাই এখন গোটা এলাকার। সরকারি তালিকায় দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হলেও গোবিন্দপুর ও তার আশপাশে নেই কোনো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা অত্যন্ত অপ্রতুল।

উপকূল ও সুন্দ‌রবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম ব‌লেন,
প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে কয়রা উপকূলের খবর শিরোনাম হয়, মান‌বিক সহায়তার মাধ্য‌মে ক‌য়েক‌দিন সহানুভু‌তি দেখা‌নো হয়। কিন্তু মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিরস‌নে কার্যকরী কোন পদ‌ক্ষেপ নেয়া হয় না। এটা দুঃখজনক। দশহা‌লিয়া, আটরা, লোকা ও গো‌বিন্দপুর এলাকা ক‌পোতাক্ষ ন‌দের তীরবর্তী হওয়ায় ও বাঁধ জরাজীর্ণ থাকায় প্লা‌বিত হওয়ার চরম ঝুঁ‌কি নি‌য়ে সেখানকার মানুষ বসবাস ক‌রে। অগ্রা‌ধিকার ভি‌ত্তি‌তে ওই এলাকায় এক‌টি সাইক্লোণ শেল্টার নির্মাণের দা‌বি জানান তি‌নি।

কয়রা উপ‌জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মামুনার র‌শিদ ব‌লেন, ওই এলাকায় এক‌টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা জরুরী। গোবিন্দপুর গাজী আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজকে কেন্দ্রে ক‌রে এক‌টি আশ্রয়‌কেন্দ্র নির্মাণ করা যে‌তে পা‌রে। উর্ধতন কর্তৃপ‌ক্ষের সা‌থে আলোচনা ক‌রে অগ্রধিকার ভি‌ত্তি‌তে এক‌টি আশ্রয়‌কেন্দ্র নির্মা‌ণের পদ‌ক্ষেপ নেয়া হ‌বে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.