দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

বুনো কেওড়া: প্রকৃতি ও মানুষের খাদ্যে নতুন সম্ভাবনা

16

দেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এ বনের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদঘেঁষে দেখা মেলে সারি সারি সবুজ কেওড়া গাছের। বর্ষার স্নিগ্ধ পরিবেশে এসব গাছে ঝুলে থাকা অসংখ্য কেওড়া ফল যেন প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। দেখতে অনেকটা লটকন বা ডুমুরের মতো হলেও কেওড়া ফল টক স্বাদের, যা একদিকে বন্য প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য, অন্যদিকে মানুষের জন্যও উপকারী।

বন্যপ্রাণীর প্রিয় খাবার
সুন্দরবনের হরিণ, বানর এবং নানা প্রজাতির পাখিরা এই কেওড়া ফল খেতে পছন্দ করে। ফল পাকতে শুরু করলে বনের ভেতরে প্রাণীদের আনাগোনা বাড়ে, যা সুন্দরবনের খাদ্যশৃঙ্খলা ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত ফাল্গুনে কেওড়া গাছে ফুল আসে এবং চৈত্র-বৈশাখ থেকে ফল ধরতে শুরু করে। আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।

খাদ্যগুণ ও উপকারিতা
কেওড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Sonneratia apetala। এটি মাঝারি থেকে বড় আকৃতির চিরসবুজ ম্যানগ্রোভ গাছ, যা প্রায় ২৯ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এই গাছ লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় এবং উপকূলীয় এলাকায় ভূমির সংরক্ষণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

কেওড়া ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও নানা পুষ্টিগুণ। এর টক স্বাদ আসে সাইট্রিক অ্যাসিডের কারণে। পেটের সমস্যা, বিশেষ করে বদহজমে এটি কার্যকর বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। উপকূলের মানুষ কেওড়া ফল দিয়ে চিংড়ি মাছ বা ডাল দিয়ে সুস্বাদু তরকারি রান্না করে থাকেন। পাশাপাশি, এই ফল দিয়ে তৈরি আচার ও চাটনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

পরিবেশগত গুরুত্ব
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রে কেওড়া ফল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কেওড়া গাছ এবং এর ফল বনের প্রাণীদের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়ক। একই সঙ্গে কেওড়া ফুল থেকে মধু সংগ্রহ হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

লবণাক্ত জমিতে জন্মানোর উপযোগিতার কারণে কেওড়া গাছকে বিশেষ ফসল হিসেবে বিবেচনা করছেন পরিবেশবিদরা। উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায়ও এই গাছ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

সংরক্ষণের আহ্বান
বন বিভাগ ও পরিবেশবিদরা কেওড়া গাছের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে এর সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁদের মতে, কেওড়া গাছ শুধু বনের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষায়ও এক নীরব রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে।

ফল ও মধুর পাশাপাশি উপকূলীয় সুরক্ষায় কেওড়া গাছ একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঢাল—যা আমাদের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এক মূল্যবান সম্পদ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.