দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

‘বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে’

42

পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেছেন, সরকার এখন বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে এবং দেশের স্বার্থেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে আজাদ মজুমদার বলেন, বিশ্বে এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে পূর্বের শত্রুরা পরবর্তীতে মিত্রে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সম্পর্কের দিক দেখান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পাকিস্তানপন্থী হয়ে যাচ্ছে—এমন প্রশ্নে আমরা অবাক হইনি। কারণ কিছু মানুষ এখনো স্বাধীন বাংলাদেশের পরিচয়ে বিশ্বাস রাখতে চায় না। তবে আমাদের জবাব পরিষ্কার—আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এখন বাংলাদেশকেন্দ্রিক এবং আমাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রসঙ্গে আজাদ জানান, সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে। সেইসঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া একটি আবেগঘন বিষয়। পাকিস্তানের সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম এ বিষয়ে ইতিবাচক হলেও তাদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী সবসময় বিরোধিতা করেছে, তাই আনুষ্ঠানিক ক্ষমা এখনো আসেনি।

সম্পদের ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আজাদ মজুমদার। ১৯৭৪ সালের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা প্রায় ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদানের টাকাও বাংলাদেশ দাবি করেছে।

তিনি বলেন, আটকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তান এর আগে মাত্র ১.২৫ লাখ মানুষকে ফিরিয়ে নিয়েছিল, অথচ সে সময় বাংলাদেশে ৩.২৫ লাখ লোক আটকে ছিল।

সবশেষে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে এই বিষয়গুলোই প্রধান বাধা। তবে আলোচনা ছাড়া এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় এবং অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক সেটাই করছে। বহু বছর পর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আলোচনায় এনেছে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য সম্ভাব্য ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ইস্যু উত্থাপন করেছে।

আজাদ মজুমদার জানান, গত ডিসেম্বরে মিশরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান চেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বালুচের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আবারও সেই আহ্বান জানিয়েছেন এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে জোর দিয়েছেন।

তার ভাষ্য, “ভবিষ্যতের স্বার্থে এখন সময় এসেছে—বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একসঙ্গে কাজ করবে এবং এগিয়ে যাবে।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.