দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

বিদায় নিল রহমতের রোজা, শুরু মাগফিরাত

38

মো. মোজাহিদুর রহমান : রমজান মাস ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় সময়। মুসলিমদের জন্য এটি শুধুমাত্র এক মাসের রোজা বা উপসানার সময় নয়। বরং এটি আত্মশুদ্ধি, তওবা, মাগফিরাত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ সময়। রমজানের প্রথম দশক, যে সময়ে আমরা রহমত বা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করি। তা এখন বিদায় নিয়েছে। আজ থেকে শুরু হলো মাগফিরাতের দশক, যে সময়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাফ করে দেন। তাদের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি দেন। রমজান মাসের এই বিশেষ দশকগুলোতে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে তাওবা, দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। রমজানের রহমত, মাগফিরাত, ও নাজাত (মুক্তি) এই তিনটি বিষয় কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম দশকটি রহমতের দশক, যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বান্দাদের প্রতি তাঁর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষিত করেন। দ্বিতীয় দশক, অর্থাৎ এখন থেকে শুরু হওয়া মাগফিরাতের দশক, এই সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বান্দাদের পাপ ক্ষমা করে দেন এবং তাদের আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটান। পরবর্তী দশক, যা মুক্তির দশক, সেখানে আল্লাহ বান্দাদের নরক থেকে মুক্তি দেন এবং তাদের রক্ষা করেন।
মাগফিরাত বা ক্ষমার এই দশকটি আল্লাহর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ করুণা ও মাফ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক মাসব্যাপী রমজানের অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা এখানে পরিপূর্ণতা লাভ করে। যেখানে সৎকর্ম, সৎচিন্তা এবং সঠিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সš‘ষ্টি অর্জন করতে পারেন। এ সময়টিতে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার রাহমত ও মাগফিরাতের আশায় থাকেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রমজানের এই সময়টিতে ইবাদত ও দোয়া করা আরও সহজ ও গ্রহণযোগ্য হয়। কারণ এই মাসের প্রতিটি ক্ষণ একে অপরের চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ।
কিš‘ মাগফিরাতের এই দশকটি সঠিকভাবে উপভোগ করতে হলে, আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। প্রথমত, এই দশকে আমাদের উচিত তাওবা করা এবং নিজ থেকে আমাদের সকল পাপ ও ভুল স্বীকার করা। কোরআন ও হাদীসে বলা হয়েছে, যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে, আল্লাহ তাদের সব পাপ মাফ করে দেন। এ জন্য এই সময়টিতে আমাদের উচিত নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা। হারাম কাজ থেকে বাঁচা এবং নেক আমল বেশি বেশি করা।
দ্বিতীয়ত, মাগফিরাতের এই সময়টিতে আমাদের উচিত একে অপরকে ক্ষমা করা। আমরা যারা একে অপরের বিরুদ্ধে কিছু মনে করি, তাদের উচিত এই সময়টিতে একটি সম্পর্কের পুনর্নবীকরণ করা। পবিত্র রমজানে যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করেন, তখন আমাদেরও উচিত একে অপরকে ক্ষমা করে দেওয়া। এভাবে আমরা আল্লাহর মাগফিরাতের সেরা উপহার লাভ করতে পারব।তৃতীয়ত, মাগফিরাতের এই সময়টিতে দান-খয়রাত করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রমজানে আল্লাহর কাছে সব ধরনের নেক আমল কবুল হয়। আর দান করা একটি বড় নেক আমল। এই সময়টিতে যারা দরিদ্র, অভাবী ও নিপীড়িত, তাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে মাগফিরাত লাভ করতে পারি। দান-খয়রাত শুধু সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে সহায়তা করে না, বরং এটি আমাদের নিজেদের আত্মা এবং হৃদয়কেও পরিশুদ্ধ করে।এছাড়া, আমাদের উচিত রমজান মাসের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য উপলব্ধি করা। এটি কেবল একটি মাস নয়, বরং একটি সুযোগ যা আমাদের আত্মবিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক চমৎকার অবকাশ। রহমত ও মাগফিরাতের এই দশকগুলোতে কেবল একটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো – আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কের গভীরতা। এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে হবে, আরও সৎ হতে হবে এবং আমাদের ইবাদত ও দোয়া আরও আন্তরিকভাবে করতে হবে। এভাবে, মাগফিরাতের দশক শুরু হওয়ার মাধ্যমে রমজানের মহিমা এক নতুন মাত্রায় প্রবাহিত হয়। এটি একটি সময়, যখন আল্লাহর কাছে আমাদের সবার পাপ মাফ করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং, আমাদের উচিত এই মহামূল্যবান সময়টিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা, নিজেদের ভুল শোধরানো এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে এই পবিত্র মাসটি শেষ করা।রমজান মাস আমাদের শিক্ষা দেয়, ক্ষমা করা এবং ক্ষমা প্রাপ্তি আল্লাহর এক মহান দান। তাই, মাগফিরাতের দশকটি হতে পারে আমাদের আত্মশুদ্ধির এবং আল্লাহর প্রতি আরো কাছে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়।
(লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও সমাজসেবক)

Leave A Reply

Your email address will not be published.