দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

বাস বোমা হামলা: নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সুযোগ নাকি ভুয়া হামলা?

2

গত বৃহস্পতিবার রাতে তেল আভিভে একের পর এক বাসে বোমা হামলা ঘটে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হামলার পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হামাস ও ইরানের দিকে আঙুল তুললেও, কোনো গোষ্ঠীই দায়িত্ব স্বীকার করেনি। হামাসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলা ভুয়া হতে পারে। এই হামলা নেতানিয়াহুর সরকারের অভ্যন্তরীণ চাপ কমানোর জন্য করা হয়েছে।

সন্ধ্যা ৮:৩০টায় তেল আভিভের দক্ষিণে বাত ইয়ামের হাআমাল স্ট্রিটে একটি বাস পার্কিং লটে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। একজন যাত্রী বাস চালককে একটি সন্দেহজনক প্যাকেজের কথা জানান। যার পর বাসটি জরুরি ভিত্তিতে খালি করা হয়। এরপরই বাসের পিছনে একটি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়।

এই বিস্ফোরণ ঘটে বাত ইয়াম স্টেডিয়াম এবং বাত ইয়াম কান্ট্রি ক্লাবের পার্কিং লটে আগে ঘটে যাওয়া আরও দুটি বাস বিস্ফোরণের কয়েকশ মিটার দূরে। এই বাসগুলো অন্যান্য বাস থেকে কিছু দূরে পার্ক করা ছিল, এবং বিস্ফোরণের সময় সেখানে কেউ ছিল না।

এরপর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আরও দুটি বিস্ফোরক ডিভাইসের সন্ধান পায়। একটি হোলনের উলফসন হাসপাতালের কাছে একটি বাসে পাওয়া যায়, যা নিষ্ক্রিয় করা হয়। অন্যটি ইয়িমিট ২০০০ এলাকায় একটি বাসে পাওয়া গেলেও পরে তা এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নয় বলে ঘোষণা করা হয়।

হোলনের বাসে পাওয়া বিস্ফোরক ডিভাইসের একটি ছবি হিব্রু মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, যাতে আরবিতে লেখা ছিল, “তুলকারেমের প্রতিশোধ”। এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, এমনকি হালকা আহতও কেউ হয়নি, যা অনেক ইসরায়েলির কাছে “অলৌকিক” বলে মনে হয়েছে।

 

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, বোমাগুলো ভুল সময়ে বিস্ফোরিত হয়েছে কারণ টাইমার ভুলভাবে সেট করা ছিল। তাদের দাবি, বোমাগুলো শুক্রবার সকাল ৯টায় বিস্ফোরিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিস্ফোরিত হয়। তবে প্রথম বিস্ফোরণের খবর সন্ধ্যা ৮:৩০টায় পাওয়া যায়, যা এই ব্যাখ্যাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।

তৃতীয় বাসে সন্দেহজনক প্যাকেজ দেখার কথা বলেছেন যে যাত্রী, তিনি জানান, বাস খালি করার সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনাকে অনেক ইসরায়েলি “অলৌকিকতা” বলে বর্ণনা করেছেন। একইভাবে, প্রথম দুটি বাস বিস্ফোরিত হয় নির্জন এলাকায়, যা ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে।

একটি বোমায় আরবিতে লেখা নোট পাওয়া গেছে, যা হামলার উদ্দেশ্য বোঝার জন্য একটি সূত্র হিসেবে কাজ করছে। তবে কোনো গোষ্ঠীই দায়িত্ব স্বীকার করেনি, যা এই হামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই বাস বোমা হামলাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান তীব্র করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরও সেনা ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করেছেন এবং একটি “বৃহৎ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান” শুরু করার কথা বলেছেন। তিনি এই ঘটনাকে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাতিল করার জন্যও ব্যবহার করছেন।

হামাসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, এই বোমা হামলা নেতানিয়াহুর সরকারের দ্বারা পরিকল্পিত হতে পারে। অভ্যন্তরীণ চাপ কমাতে একটি বাহ্যিক শত্রু তৈরি করার জন্য এই হামলা করা হয়েছে। তিনি ইহুদি গোষ্ঠীগুলোর ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করেন। ইহুদিরা নিজেরাই ইহুদিদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করেছে বহুবার।

এই হামলার পেছনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য দাবিদার না থাকা, হামলার খারাপভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, এবং কোনো হতাহত না হওয়া—এসব কিছুই ভুয়া হামলার অভিযোগকে জোরালো করেছে।

ইসরায়েলি সরকার হামাস ও ইরানের দিকে আঙুল তুললেও, এই হামলার পেছনের সত্যিকার উদ্দেশ্য এখনও রহস্যেই রয়ে গেছে। ইসরায়েল এই বিষয়ে সেন্সরশিপ জারি করায়, তেল আভিভ বাস বোমা হামলার প্রকৃত কারণ এখনও অজানা।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.