দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জের বাজেট কাল

39

দরজায় কড়া নাড়ছে আরও একটি বাজেট। আগামীকাল ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বরাবরের মতো এবারও নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকবে এই বাজেটে। একইসাথে থাকবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংমিশ্রন। দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে পড়লেও এই বাজেট স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চলতি বাজেটের চেয়ে আসন্ন বাজেট কিছুটা ছোট হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। খসড়া অনুযায়ী বাজেটের আকার ঠিক হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মত। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র বাজেট হবে এটি।

সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। আগামী ২ জুন সোমবার বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হবে। বৃহস্পতিবার এক তথ্যবিবরণীতে এমন খবর দিয়েছে সরকার।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মজবুত করার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বর্তমান সরকার।

সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবারের বাজেট কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি বছরের দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার থেকে কম।

এবার সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এটিকে ৭% এ নামিয়ে আনতে চাচ্ছে সরকার। যদিও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন যে, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ এই লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৬২% হবে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।

অর্থ উপদেষ্টা জানান, জিডিপির উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫.৫%, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের ৫.২৫% এর থেকে কিছুটা বেশি। তবে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫% এর নিচে প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে।

নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষার জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বাজেটের অগ্রাধিকারপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ চলতি রাজস্ব বছরে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে সরকার যে বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবে। কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভাতা অব্যাহত থাকবে। তবে, বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন, আবার কেউ বাস্তবায়নের জটিলতাকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

আসন্ন বাজেটকে ব্যবসা-বান্ধব আখ্যায়িত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে করনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আগ্রাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ।

অনুন্নয়ন বাজেট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান রাজস্ব বছরের বরাদ্দের চেয়ে যা ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়বে।

কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া বাজেটের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সম্পদ কর বাড়ানো এবং কর আদায় ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সরাসরি কর বৃদ্ধি এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.