দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

পাকিস্তান-ভারত আকস্মিক যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ কী

15

নতুন করে শুরু হওয়া ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পটভূমিতে আকস্মিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এক নাটকীয় মোড় নিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে এ সংঘাত ছিল বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এই ঘটনায় পাকিস্তানের পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে কাশ্মীর ছাড়িয়ে ভারতের সামরিক স্থাপনাগুলোর দিকেও।

পরিস্থিতি যখন একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ করেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি উভয় দেশের নেতাদের বিচক্ষণতার জন্য অভিনন্দন জানান।

যদিও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, এ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যকার সরাসরি আলোচনার ফসল এবং এতে বাইরের কোনো পক্ষের ভূমিকা নেই। অন্যদিকে, পাকিস্তান উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দাবি করেছেন, তারা দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে লাগাতার আলোচনা করেছেন এবং আলোচনার মধ্য দিয়েই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো গেছে।

কিন্তু যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিস্ফোরণের খবর আসতে শুরু করে, যা এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করেন। পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছে, যদিও তারা যুদ্ধবিরতির প্রতি আন্তরিক থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা বরাবরই অস্বীকৃত—বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে। ড. অপর্ণা পান্ডে মনে করেন, ভারত নিজের ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ভারত-চীন বা ভারত-পাকিস্তানই হোক। এর বিপরীতে, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানায়।

অতীতের মতোই, এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেও রয়েছে প্রচারযুদ্ধ এবং কূটনৈতিক দখলদারির প্রতিযোগিতা। একে অপরের ওপর হামলার অভিযোগ, পাল্টা হামলা এবং মিডিয়া যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দুই দেশ নিজ নিজ জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে।

পর্যটকদের ওপর হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে ভিসা স্থগিত, বাণিজ্য স্থগিত এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পানিবণ্টন চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এখন দেখার বিষয়, এসব প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে কিনা।

সব মিলিয়ে, এই যুদ্ধবিরতি যতটা না শান্তির ইঙ্গিত, তার চেয়ে বেশি একটি জটিল, অবিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্কের অস্থায়ী বিরতি—যা যে কোনো সময় আবার আগুনে রূপ নিতে পারে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর ওপরই নির্ভর করছে এই অঞ্চল কতটা স্থিতিশীল থাকবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.