একটি ফাঁকা রেস্তোরাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন বেনজির রৌফি। তার কণ্ঠে অসহায়তা, চোখে আতঙ্ক। পাকিস্তানে বসবাসকারী লাখ লাখ আফগানের মতো তিনিও জানেন না আগামীকাল কী হবে। কারণ, পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি আফগানদের জন্য দেওয়া এসিসি কার্ড বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে শুরু হয়েছে নির্বাসনের দ্বিতীয় ধাপ।
এই পদক্ষেপে ৮ লাখ নিবন্ধিত আফগান এবং ইতোমধ্যেই সীমান্ত পার করে দেওয়া আরও ৮ লাখ অননুমোদিত আফগান নাগরিক পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেনজির বলেন, “১৯৯০-এর দশকে গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল ১৩। এখন যদি ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে আমি বাঁচব না। হয় হৃদস্পন্দন থেমে যাবে, নয়তো আত্মহত্যা করব।”
রাওয়ালপিন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় সম্প্রতি চালানো পুলিশ অভিযানে ১০ আফগান নারীকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের মতে, আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য শিক্ষা, কাজ এবং জনসমক্ষে চলাফেরা নিষিদ্ধ প্রায়। এক নারী বলেন, “তালেবান আমাদের গ্রহণ করবে না। আমার ফিরে যাওয়ার মতো কেউ নেই।”
এসিসি হোল্ডারদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার জন্য সময়সীমা এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, তবে বাস্তবে তারা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যাঁরা পাকিস্তানেই জন্মেছেন, পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহিত, বা দশকের পর দশক ধরে সেখানেই বসবাস করছেন—তাদেরও আবাসিক অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শাসক তালেবান সরকারের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার তাদের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই সংকটের মাঝেই নিঃস্ব, উদ্বাস্তু, এবং ভয়বহ ভবিষ্যতের মুখোমুখি লাখো আফগান। তাদের কণ্ঠে এখন একটাই প্রশ্ন—“আমরা যাব কোথায়?”