দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

নেতৃত্বের গুনাবলী যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য—- ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের

23

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ হচ্ছে আল্লাহর বিধান ও রাসুল (সা.) এর নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা।

মূলত, আমাদের আদর্শ হচ্ছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) আদর্শ; তার সংগ্রামই হলো আমাদের সংগ্রাম। আল্লাহ তায়ালা সকল দ্বীনের ওপর দ্বীনে হকের বিজয় দানের জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন।

সে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল রাসুলের (সা.) হাত ধরেই। এ বিজয়ের আগেই আল্লাহ তায়ালা মোমিনদের জন্য সুসংবাদ হিসাবে সুরা নসর নাযিল করেছিলেন। সে সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, দলে দলে মানুষ ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন।

এখন আমাদের দেশে সে পরিস্থিতি অনুভূত হচ্ছে। মানুষ দলে দলে ইসলামের পথে অগ্রসরমান। তাই, আমরা যদি আমাদের যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, কর্মতৎপরতা, নিষ্ঠা ও নেতৃত্বের গুনাবলী যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। তিনি ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে ইউনিয়ন কর্মপরিষদ/টীম সদস্য শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে ও সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলামের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টীম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, জেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। দারসুল কুরআন পেশ করেন মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।

এ সময় খুলনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, শেখ সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, অধ্যাপক স ম এনামুল হক, গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, আশরাফুল আলম, কয়রা উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, পাইকগাছা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীর মাওলানা শেখ মো. আবু ইউসুফ, দাকোপ উপজেলা আমীর মাওলানা আবু সাঈদ, রূপসা উপজেলা আমীর মাওলানা লাবিবুল ইসলাম, তেরখাদা উপজেলা আমীর নাহিদ হাসান, ডুমুরিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, ফুলতলা উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান প্রমুখ।
ডা. সৈয়দ তাহের বলেন, ময়দানে আমাদের আরো তৎপর ও গণমুখী হতে হবে।

দায়িত্ব পালনে অধিক সচেতন ও সময় দানে আরো পরিকল্পিত হতে হবে। ময়দানের চাহিদার আলোকে কাজের মান বাড়াতে হবে এবং সময় দিতে হবে। আমাদের কাজগুলো আরো যুগোপযোগী এবং পরিকল্পিত হওয়া দরকার। দায়িত্বশীলগণকে কাজ নিয়ে আরো ভাবতে হবে এবং সেই আলোকে পরিকল্পনা তৈরী করে ময়দানে কাজ করতে হবে। একজন মুমিনের দুইদিন সমান হবে না বরং আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে আরো উত্তম হতে হবে।

নায়েবে আমীর আরও বলেন, শত অন্যায়, অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে টিকে আছি আল্লাহর রহমতের কারণে। আমরা অধৈর্য হইনি, মিথ্যা মামলা সত্ত্বেও কখনো কোনো অন্যায়ের কাছে কখনো মাথানত করিনি। আমরা সংগঠনের নিকট থেকে ইসলামের যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেয়েছি তা আপাতত অত্যন্ত কঠিন মনে হলেও দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন এবং পালন করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব কঠিন কাজকেও সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দ্বীনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব হল ভবিষ্যতে যারা ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবেন তাদেরকে আমাদের চাইতেও বেশী দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় পৃথক পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে। সংগঠনের সকল বিভাগকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করে জনগণের বাড়ি-বাড়ি পৌছাতে হবে। জামায়াত কর্মী হিসাবে আমাদের সমাজ পরিবর্তনে সামনের কাতারে থাকতে হবে।

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে এবং আমৃত্যু আল্লাহর গোলামী প্রত্যেক মু’মিনের অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় সবকিছুই দিয়েছেন। আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে করা হয়েছে সুবিন্যস্ত। তাই প্রত্যেক মু’মিনের অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হলো নিজে সস্তষ্ট থেকে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করা। সুরা আল ফজরের শেষ আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে সে নির্দেশনাই দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, হে প্রশান্ত আত্মা! তোমরা তোমাদের প্রভূর দিকে প্রত্যাবর্তন করো সন্তষ্টচিত্তে এবং তার সন্তষ্টি অর্জনের মাধ্যমে। এতএব তোমরা তার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো। মূলত, এটিই মু’মিন জীবনের প্রকৃত সাফল্য।

অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান বলেন, মূলত, দুনিয়ার সাফল্য প্রকৃত সাফল্য নয় বরং আখেরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য। রাসূল (সা.) যখন মানুষের মাঝে দ্বীনের হক্বের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন তখন কম সংখ্যক মানুষে সে দাওয়াত গ্রহণ করেছিল। যা তাকে বেশ বিচলিত ও পেরেশান করতো। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাকে এ বিষয়ে আশ^স্ত করতেন। দ্বীন বিজয়ের জন্য ময়দানে নিরলসভাবে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সবোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহবান জানান।

অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, পবিত্র কুরআন মাজিদে ইকামাতে দ্বীনের কাজ জান ও মাল দিয়ে করতে বলা হয়েছে। সংগঠন পরিচালনায় আমাদের আরো উচ্চমানে অবস্থান করতে হবে। ইউনিট পর্যন্ত কাজকে সক্রিয় করতে হবে। সকল সেক্টরকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। কাজের সঠিক পর্যালোচনা করতে হবে। কাজের মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা এমরান হুসাইন বলেন, বিগত ৫৪ বছরে মানুষের তৈরি মতবাদে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে। ফলে যারা শাসন ক্ষমতায় ছিল তারা ব্যতিত রাষ্ট্রের কোন নাগরিক শান্তি পায়নি ও অধিকার পায়নি। মানুষের তৈরি আইনে একটি গোষ্ঠী সুবিধা পায়, অপর গোষ্ঠী সুবিধা হারায়। কিন্তু আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। সমাজে কোন বৈষম্য থাকবে না। শান্তির বাতিঘর ইসলাম। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি উপস্থিত দায়িত্বশীলদের আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।#

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.